Wednesday 25 February 2015

চৌম্বকত্ব

এক বন্ধু একবার যে সবকিছু খায় তার এক কথায় প্রকাশ করেছিল সবখেউকা। বাঙালি মাত্রেই সবখেউকা। আমরা খাবারও খাই, মদও খাই, সিগারেটও খাই। আবার পাল্টি আর খাবি তো ঘনঘন খাই। তবে চুমু খাওয়া নিয়ে এরকম তোলপাড় যে কী কারণে শুরু হল কে জানে। কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়ছিলাম যেখানে লেখক বলছিলেন কোন একটা আচার অন্য সংস্কৃতি থেকে বেমালুম ঝেড়ে দেয়া যায়না, সেই সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট না জেনে। সেদিক থেকে দেখলে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া একটা পশ্চিমী আচার, এখানকার সামাজিক প্রেক্ষাপটে সেটা দৈনন্দিন অকিঞ্চিৎকর ঘটনা হলেও সেটার অন্ধ অনুকরণ করে ওরা খাচ্চে তাই আম্মো খাই বললে, তাতে আপত্তি করার কিছু না থাকলেও দু ধরনের মানুষ মনে করে এবার দেশটা জাহান্নামে গেল। এক যারা এখনো বাপ-ঠাকুদ্দার যুগে পড়ে আছে যাদের কাছে মাঝ রাতে ওগো শুনছর চেয়ে বেশি কিছু মানেই প্রেমের আদিখ্যেতা, সকাল বেলা চান করে কালী, লক্ষ্মী, রামকৃষ্ণ, সারদার ছবিতে পেন্নাম ঠুকে বাসে চাপে, তারপর সারাদিন মুখের মারিতং জগত আর কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা। আর একদল হল যাদের চুমু খাবার, প্রেম করার ইচ্ছে ষোলআনা কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়না, তারা সঙ্গত কারনেই ভাবে এসব স্বেচ্ছাচার বন্ধ হোক একেই জীবনটা আলুনি হয়ে আছে তার ওপর চোখের সামনে কপোতকপোতীরা চুমাচাটি করছে দেখলে, ফ্রাস্ট্রু খেয়ে রাস্তায় বেরনোর জো থাকবেনা। সমাজে খাওয়ার প্রতি বিস্তর বিধিনিষেধ, বেণীমাধব শীল বাবু তো হুড়কো দিয়ে গেছেনই তাছাড়াও রয়েছে কি কি খেতে গেলে লুকিয়েচুরিয়ে করা ছাড়া গতি নেই- চুমু, মদ, গরু। চুমু খেয়ে বিপ্লব সাধু প্রস্তাব কিন্তু বাঙালি সমাজ এখনো অতটা স্বাধীন হয়নি যে কে কী বলল তাতে ছেঁড়া যায় বললেই সব চুকেবুকে গেল, এখানে গা জোয়ারি মরাল পুলিস সব। কম্যুনিস্টগণও ব্যতিক্রম নন, ষাট সত্তরের নবজাগরণে হয়তো শহুরে বাঙালি কিছুটা লিবারাল তবু ঘরে তো সেই লক্ষ্মীর পট, তাই যে মেয়েগুলির ছবি ছেপেছে চুমু খাবার তাদের কপালে "হতচ্ছাড়ি বংশের নামে চুনকালি দিলি" টাইপের হেনস্থা ছাড়া আর কিছুই জুটবেনা। ছেলেদের ভাগ্য অতটা মন্দ নয়, হাজার হলেও বংশের বাতি বলে কথা. আর এখন বাবারাও ছবি বিশ্বাস টাইপের কুলাঙ্গার বেরিয়ে যাও টাইপের ডায়লগ ঝাড়েনা, তাদের বেলা "সব ওই মেয়েটার দোষ, আমাদের হীরের টুকরো ছেলেকে বশ করেছে, আমার মাথার দিব্যি রইল ওর সাথে কোনো সম্পকর্ রাখিসনা" জাতীয় জননী থেকে চোতা করা বুলি বরাদ্দ বড়জোর। যাই হোক যারা এই প্রতিবাদে সামিল হলেন তাদের বলি ব্র্যাভো, চুমু খাও একশ বার হাজার বার খাও, ভেক বকধামর্িক বাঙালি মরাল পুলিসের লালটু চাঁদবদনে এরকম সপাটে থাপ্পর আরো গুটিকয় দরকার, তবে যেটা দিয়ে লেখাটা শুরু করেছিলাম সেই প্রেক্ষাপটটিও যেন সব সময় মনে থাকে, অনেকে এই ব্যক্তিগত জীবনে সমাজ শোধকদের নাক গলানোর বিরুদ্ধে বিরক্ত হলেও, তাদের সামাজিক পারিবারিক অবস্থান থেকে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য যে বিস্তর সাহস দরকার সেটা সকলের থেকে আশা করে তাদের অপ্রস্তুত করে এই বিক্ষোভ থেকে বিমুখ না করে, বরং সবাইকে সামিল করলে তবেই আন্দোলনের সার্থকতা। সেটা না হলে এই আন্দোলনও আর পাঁচটা শহুরে শখের প্রতিবাদে এসে দাঁড়াবে, যেখানে গ্রাম মফস্বল ব্রাত্য। 

হোককলরব

নিষাদ রাত
ওরা জেগে রয়
নতুন দিনের আলোর আশে
যুগান্তরের প্রহরী যত
ওরা গেয়েছিল গান সে রাতে
সিগার, ডিলান 
লেনন, সুমন
হয়তোবা ছিল কারো কোলে কারো মাথা
ওরা যে বেঁধেছিল 
মানবশৃঙ্খল
রাত বেড়ে চলে, চলে গান
ওরা জেগে রয়

তারপর শুধু কালো আর কালো
বিদ্যুৎচমকের মত
ফিরে ফিরে আসে গুটিকয় ফ্ল্যাশব্যাক
ছাত্রীর স্তন খামচে ধরা লোলুপ পুলিশি হাত
লাঠির হানা, চটি পরা পা
চুপ একদম হাপিস করে দেব

নতুন সকাল
সবর্ শরীরে তখনো শুকনো রক্ত লেগে
গ্লানি বেদনা সব ধুয়ে মুছে ফেলে
ওরা তবু উঠে দাঁড়ায়
ফের ধরে গান
ভয় পেয়েছেন, তিনি ভয় পেয়েছেন বটেই
এবার দোহাই দেবার পালা যে তাঁর
মাদক থেকে এল মাও, 
এল হামার্দ থেকে হটপ্যান্ট
ওরা হেসে ওঠে, আরো স্ফুতর্িতে গায় গান
কসাইয়েরও বুক তবে কাঁপে

তবে ওরা আর সেই ওরা নেই
দশক ছাড়িয়ে শত, সহস্র, অযুত ওরা আজ
হাওয়ায় ভেসে যায়
ওদের বেসুরো সুর
দিক থেকে দিগান্তরে
আগুন তবে এখনো জ্বালানো যায়
এ প্রতিবাদী শহরে
ওদের গানের কন্ঠ রূদ্ধ হবেনা আর
চেয়েছিল শাসকের হাত
গলা টিপে সেই গান রুখতে
আজ তারা অবাক পৃথিবী
কী মন্ত্রে আজ লক্ষ মানুষ যেন
নেমে দাঁড়িয়েছে পথে
হোক কলরব

পাশে না থেকেও সাথে আছি যাদবপুর

বুদ্ধিজীবি

স্কুল কলেজে পড়ার সময় বা বলতে গেলে ২০০৬ সাল অবধি এই বুদ্ধিজীবি শব্দটার তেমন কোন তাৎপযর্ই ছিলনা রোজকার জীবনে। বরং তার প্রতিশব্দ আঁতেল ব্যবহার হত ব্যঙ্গাথর্ে। কেউ আটর্ ফিল্ম দেখতে গেছে? আঁতেল। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রেখেছে? নিঘর্াৎ আঁতেল। কাঁধে শান্তিনিকেতনি ঝোলা, এলোমেলো চুল? ব্যাটা শিওর আঁতেল। পাড়ার আড্ডায় প্রায় রোজকার বয়ান "ছাড়, আর আঁতলামো মারিসনা"। সেই বহুপরিচিত আঁতেল তো আদপে intellectuel যারে ফরাসিরা কয় অ্যাঁতেলেকতুয়েল্। আঁতেল এর আধুনিক বাঙলায় খোরাক মানেটা নিঘর্াৎ এসেছে কলেজ পাড়ায় ষাটের দশকে যখন হয়তো কোন কামু-সাত্রর্ অনুপ্রানিত কেউ ফরাসী জাহির করতে ঐ অ্যাঁতেলেকতুয়েল্ বলে ফেলেছিল। কূপমণ্ডুকতা তো সব জাতিরই বৈশিষ্ট, কম আর বেশী, তো বাঙালিরাই বা কম যাবে কেন, নিজের পরিধির বাইরে যা কিছু পড়ে তাকে হয় খোরাক দাও নয় ক্যালানি। তাই আঁতেল শব্দের বিবর্তনেও নিঘর্াৎ জুড়ে আছে কোন শহীদ যার আঁতেল হবার সাধ অকালেই ঘুচে গিয়েছিল। 

Saturday 14 February 2015

প্যালারামের ক্যালে দর্শন

প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল বছর দশেকে যেবার বাবা অফিসের লাইব্রেরি থেকে সমগ্র কিশোর সাহিত্য এনে দিয়েছিল পড়ার জন্য। সেই ডি -লা- গ্র্যান্ডি-মেফিস্টোফিলিস আর মঁসিযো ভেনেজাভেক মোআ এর সাথে পরিচয় হবার সময় থেকে ফরাসী ভাষার ওপর যে টান জন্মেছিল যত বয়েস হয়েছে সেই টান আরো অনেকগুণ বেশি হয়ে এসেছে আমার কাছে। তারপর জানলাম রেনেসাঁস, ফরাসী বিপ্লব, ভিক্তর উগো, দুমা, সেখান থেকে কলেজ জীবনে কামু, সার্ত্র, সিমন দ বুভোয়া হয়ে ফরাসী নুভেল ভাগ বা নিউ ওয়েভ সিনেমায় গোদার, ত্রুফো - মোটের ওপর ফ্রান্স আর ফরাসী ভাষা এমন এক ইন্দ্রজাল তৈরী করেছিল যার ফল হলো ২০০৬এ শনি রবিবার পাড়ার আড্ডার মায়া কাটিয়ে আবার খাতা বই পেন নিয়ে আলিয়াঁস ফ্রঁসেস এর বেকবাগানের ক্লাসরুমে হাজিরা। সেখান থেকে শুরু হলো এক নতুন যাত্রা, ফ্রান্স আর ফরাসী ভাষাকে নতুন ভাবে জানার বিশেষ করে আধুনিক যুগের, বিশ্বযুদ্ধের পরের আর একুশ শতকের জীবনযাত্রা। আলিয়াঁস এর লাইব্রেরি থেকে শেষ করলাম টিনটিন আর অ্যাসটেরিক্স, অনেক অপেক্ষার পর শেষে হাতে পেলাম গোদারের ল পেতি সোলদা। যাওয়া শুরু হল মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলা নন্দন-২ তে আলিয়ান্স এর কার্ড দেখিয়ে ফ্রি ফরাসী সিনেমায় । ২০০৮ এ তল্পিতল্পা গুটিয়ে ইংল্যান্ড আসার পর রসদের টানাটানি অনেকটাই কমে গেল। ইউটিউব আর টরেন্ট থেকে দেখে ফেললাম একের পর এক অদ্রে তোতুর সিনেমা- কি অসাধারন অভিনেত্রী, কি অনায়াসে সব জটিল রোল প্লে করেছে। দেখলাম রোমাঁ দুরিসের ছবি, মোহিত হয়ে গেলাম লারা ফাবিয়াঁর মায়াবী রূপে আর তারও বেশী এক জোরালো, মনকে নাড়িয়ে দেয়া কন্ঠস্বরে। এরই মাঝে এক বৃষ্টির দুপুরে লন্ডনে হাঁটতে হাঁটতে কুড়িয়ে পেলাম এক ইউএসবি স্টিক, হাজার দোনোমনো করে খুলেই ফেল্লাম ফাইলটা, আর হাতে পেলাম আধুনিক ফরাসী সিনেমার সুপারহিট "বিয়াঁভেন্যু শে লে শ'তি", যেখানে এক দক্ষিণ ফ্রান্স নিবাসী কর্মীর বদলি হয় নর্দ-পা-দ-ক্যালে (Nord-pas-de-Calais) যেটা হল ফ্রান্স এর একদম উত্তরে, ভুমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে অভ্যস্ত মানুষের সেখানে যাওয়া কেরল থেকে কারো সিমলা যাবার সমান। মূল বক্তব্য থেকে অনেকটা সরে এসেছি। ব্রিটেন আসার পরও, এতো কাছে হওয়া সত্বেও, ফ্রান্স বহুদিন অধরাই থেকে গেছে। ফরাসীর সাথে যা যোগাযোগ তা ছিল শুধু কিছু সিনেমা আর Spotify এ লারা ফাবিয়াঁ আর কামিল-এর গান আর কালেভদ্রে লে মোঁদ এ চোখ বুলিয়ে নেয়া। ইউরোপে যাবার ভিসা পাওয়ার অনেক হাঙ্গামা দেখে আর এগোইনি। বিয়ের পর ইউরোপ যাবার অনেক পরিকল্পনা করে একটা ভিসা পেলাম বটে কিন্তু প্রায় একই সময় সোফিয়া নামক দুর্যোগের প্রাবির্ভাব ঘটায় সেই সব প্ল্যান এক বছর পিছিয়ে গিয়েছিল। অবশেষে গেল জানুয়ারিতে সোফিয়ার পাসপোর্ট তৈরী হবার পর সুযোগ এল সেই বহুদিনের আকাঙ্খা পূর্ণ করার। বাড়ি থেকে ফ্রান্স ১০০ মাইলও না, তবু দুরত্বটা মনে হচ্ছিল অসীম এতদিন ধরে। আলিয়াঁসের ক্লাসের সুত্রে মনে মনে যদিও ঘুরে নিয়েছি লুভ্র, আইফেল টাওয়ার, আর্ক দু ত্রিয়োঁফ, শঁজেলিজে। শুধু প্যারিস না, কল্পনা ছুঁয়ে গেছে সাঁ মালোর আর্ট মেলা, আল্পসের শ্যালে, পার্ক আস্তেরিক্স এমনকী সুদুর মার্তিনিকের ধবধবে সাদা বীচ অবদি, কিন্ত চাক্ষুষ কিছুই দেখা হয়নি। প্রচুর জমিয়ে রাখা আশা নিয়ে শেষে ১৪ই ফেব্রুয়ারী উঠে পড়লাম সপরিবারে ক্যালে মুখী ফেরীতে। মেয়ের প্রথম বিদেশ ভ্রমন, তার ওপর জীবনে প্রথম রাস্তার উল্টোদিকে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা এসবের মাঝেও মনে মনে ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম দৈনন্দিন ফরাসী শব্দগুলো, ঠিকই করে ফেলেছিলাম নির্ঘাৎ আতান্তরে না পড়লে ফরাসীতেই কথাবার্তা চালাবো। বেলা ১টা নাগাদ বহুযুগের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পা রাখলাম ক্যালের সমুদ্রতীরে, চোখ ভরে শুষে নিলাম বাড়ি ঘর, পোষাক আশাক রাস্তার দোকানের সাইন...আর শুনে নিচ্ছিলাম কথার মাঝের চন্দ্রবিন্দুগুলো, যা ইংরেজীতে একেবারেই বিরল। হয়তোবা বাকী রয়েছে এখনো রাতের আলোয় মায়াবী প্যারিস দেখা, কিন্তু দেখা হয়ে গেল সেই বিয়াঁভেন্যু শে লে শ'তির ক্যালে। মনে হল যেন বাস্তব ছুঁয়ে গেল রূপকথার দেশকে, হয়তো এতদিন ফ্রান্স ও ছিল আটলান্টিস এর মতই কল্পনার রাজ্যে সীমিত, কিন্তু সেই মূহুর্তটার পর থেকে বলতে পারব যে খানিকটা ফ্রান্স এখন থেকে আমার মধ্যেও রয়েছে। 

পরিশেষ: শুনেছি, সিনেমায় দেখেছিও অনেক এই নিয়ে কিন্তু এখন হলফ করে বলতে পারি ফরাসীদের মত চুমু খেতে কেউ পারেনা। ব্রিটেনেও সবাই রাস্তাঘাটে চুমু খায় কিন্তু সেটা গড়ে ১০ সেকেন্ডের বেশীক্ষণ ধরে না। ফ্রান্সে সেই গড় দাঁড়াল প্রায় ৩০ সেকেন্ড। 

Thursday 15 May 2014

চাঁদের পাহাড়: চলচ্চিত্র আলোচনা

ছবিটা বেশ কিছুদিন আগে দেখা তাই মনে হয়না এরকম একটা রিভিউ কেউ কারো কাজে আসবে। তবু যখন আমার এক কলিগ বলল চাঁদের পাহাড় দেখব, মনে হলো এটা যখন সিনেমাটা দেখেছিলাম তখনই লেখা উচিত ছিল। একে এমপি তার ওপর আবার মহানায়ক, জানিনা লোকে কি বলবে। যাই হোক চাঁদের পাহাড় দেখে মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছিল সেগুলোই এক এক করে লিখলাম।

১. আমি বিন্দুমাত্রও হোমোফোবিক নই কিন্তু সিনেমায় আলভারেজ আর শঙ্কর এমন হাত ধরাধরি, জড়াজড়ি করছিল সাবটাইটল না থাকলে ছবির থীমটা যে কি সেটা দূর্বোধ্য, মনে হচ্ছিল দুই পুরুষ প্রকৃতির মাঝে তাদের মধ্যের প্রেম উপলব্ধি করেছে।

২. কোন সিনেমা তার স্বাভাবিক ছন্দে যদি দেড় ঘন্টা লম্বা হয় তাকে টেনে হিঁচড়ে আড়াই ঘন্টা চালালে সিনেমার আকর্ষণ তেমন থাকেনা আর দর্শকদেরও মনে হতে শুরু করে কি কুক্ষণে টিকিট কেটেছিলাম। নাকি পরিচালক ভেবেছিলেন যেরকম সবাই খুঁজে খুঁজে সেই দোকানে যায় যেখানে রোল এ একটু বেশি আলু দেয়, সেরকম লোকে যদি আড়াই ঘন্টা সিনেমা না চলে বলবে ফ্লপ ?


৩. চলচ্চিত্রায়ন অসামান্য, তবে আফ্রিকা তার সমস্ত বিস্ময় এই ছবির একমাত্র পাওনা। বাকি সব বাকওয়াস।


৪. ভারত আইটির দেশ, হলিউডের অনেক সিনেমার স্পেশাল এফেক্টও এখন ভারতে হয়, তবু এই সিনেমার স্পেশাল এফেক্ট এরকম জোলো কেন বোঝা গেলনা। নাকি প্রযোজক মশাই শুটিং টিম কে আফ্রিকা পাঠিয়ে ই সব পায়সা খরচ করে ফেলেছিলেন? আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ তো ষাটের দশকের মনে হচ্ছিল। এর চেয়ে তো ইদানিং অনেক বাংলা সিনেমায় অনেক ভালো স্পেশাল এফেক্ট আছে।


৫. প্যানপেনে মা আর হেঁপো বাবার অবতারণা কি কারণে দরকার হলো বোঝে গেলনা, যদিওবা মেনে নেওয়া গেল আফ্রিকা যাবার আগে শঙ্করের জীবনের কিছুটা দেখানোর জন্যে কিন্তু বাকি সময় মনে হচ্ছিল ছবি লম্বা করার খুব বিরক্তিকর পদ্ধতি।


৬. সিংহ শিকারের নতুন টেকনিক শেখা গেল. প্রথমে সিংহকে মাংস-টাংস দিয়ে লোভ দেখিয়ে ডাকতে হবে, তারপর সিংহ যখন শিরারীর দিকে তেড়ে আসবে তখন প্রানপনে উল্টো দিকে দৌড়তে হবে। যখন সিংহ প্রায় ধরে ফেলেছে তখন জেসন স্ট্যাথামের মত উড়ে গিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গুলি চালাতে হবে। সেই গুলি সিংহের মাথায় লাগবেই আর সে এক গুলিতেই কাবার হবে। জে.এ.হান্টার এর শিকারের গল্প মনে পরে গেল। তিনি নির্ঘাত কবরে নড়েচড়ে উঠতেন এই নতুন উপায়ের কথা শুনে। বললে হবে, আমাদের মহানায়ক বলে কথা, হান্টার তো কোন ছার।


৭. কোন কোন রহস্য যত অদৃশ্য রাখা যায় ততই রোমাঞ্চকর লাগে। এমিটিভিল হরর বা হিদেও নাকাতার রিঙ এ অপ্রাকৃত কিছু একদম শেষ অবধি দেখানো হয়নি। বিভুতিভুষনের শঙ্কর ও কিন্তু বইতে শুধু বুনিপের আওয়াজ আর তার পায়ের শব্দই শুনেছিল। ব্যাপারটাকে সিনেমাতেও সেই অবধিই সীমিত রাখলে ভালো হতো. বুনিপ বলে যা দেখানো হলো সেটা তো একটা ভুঁড়িঅলা প্যাঙ্গোলিন তার ওপর একটা ডাইনোসরের মাথা লাগানো। এমন হাস্যকর অনুকরণ এর একটাই ঘটনা মনে আছে, আবার যখের ধন সিরিয়ালটায় গরিলা সাজা লোকটা।


৮. যখন শঙ্কর আর আলভারেজ কোন এক বিখ্যাত লেক পার হচ্ছিল ওদের সাথে ছিল একটা ছোট ডিঙ্গি নৌকা, আর সীমিত খাবারদাবার। এদিকে যখন তাঁবু ফেলছিল সেই তাঁবু দেখলে তো রাজারাজড়াদেরও বিষম খাবার কথা. দেখে মনে হচ্ছিল কোনো আরব শেখ বনে শিকার করতে গেছে, দুজন উত্সাহী পরিব্রাজক নয় যারা তাদের সব সম্বল নিঃস্ব করে বেরিয়ে পড়েছে ভ্রমন করতে। দু দুটো ঢাউস ধবধবে সাদা তাঁবু বুনিপ তো বটেই জঙ্গলের আর যত জীবজন্তু ছিল সবার ই তো চলে আসার কথা মানুষ সার্কাস দেখতে।


৯. গুহা থেকে বেরিয়ে বুনিপ মারতে যাওয়া আর এক হাস্যকর ব্যাপার, সেই সিনেমা লম্বা করার চাল। অত সব কাঠকুটো কথা থেকে এলো, অত অত দড়িই বা কোথা থেকে এলো ফাঁদ বানানোর জন্যে তা চিন্তার বাইরে। দিকহারা, ক্ষিধেয় পাগল মানুষ অতক্ষণ ফাঁদ বানাতে কাটাল এটা সিনেমাতেই চলে।

যাক লিস্টি আর বাড়িয়ে কাজ নেই, একেই ফালতু সময় নষ্ট অনেক করেছি সিনেমাটা দেখতে বসেই।