Sunday 29 March 2015

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট: এক ঝরা সময়ের ছবি

ছোটবেলার কথা মনে পড়লে খেলাধুলোর কথা যখন ভাবি প্রথমে ফুটবলের কথাই মনে আসে। আটের দশকে কলকাতা ফুটবলের রমরমা তখনো জারি। খবরের কাগজ, রেডিয়ো খুললেই ফুটবলের আলোচনা, রিলে ছাড়া কথা নেই। কৃশানু বিকাশ শিশির সুব্রত ছাড়াও নতুন আমদানি চিমা, তাছাড়া বারপুজো, দলবদল এসব নিয়েই বাজার গরম। ক্রিকেটের সাথে তখনো তেমন পরিচয় হয়নি, যদিও ভারত ততদিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। কখনো সখনও ব্যাটবল খেলা (জানতাম না সেটাকেই ক্রিকেট বলে) আর গাভাসকর কপিলদেব অমরনাথ এইকটা নাম, এগুলোই ছিল ক্রিকেটজ্ঞান। এছাড়া ইডেনে খেলা পড়লে কলকাতা ক'য়ে রিলে "রান হয়ে গেছে নয় নয় করে…" বা "বল পাঠিয়ে দিলেন পত্রপাঠ সীমানার বাইরে" বাক্যগুলো প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে। তবে আর একটা ব্যাপার জানতাম যা ছাড়া তখন ক্রিকেট ভাবা যেতো না সেটা হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 


এখন মনস্তাত্বিকরা মনে করে যে আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাল লাগার পেছনে জুড়ে আছে ঔপনিবেশিক সত্তা, সাদা চামড়ার দেশগুলোর ওপর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কালো মানুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখে নিজেদের ঔপনিবেশিক বঞ্চনার পরোক্ষ বদলা মনে করা। আমার ঐ বয়সে অত গুরুগম্ভীর ভাবনাচিন্তা করার বিষয় সেটা ছিলনা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখনকার লাইনআপ আর ফর্ম দেখেই মনে সম্ভ্রম জাগা স্বাভাবিক। ইনিংস শুরু করছে গর্ডন গ্রিনিজ আর ডেসমন্ড হেনস, ওপেনিং জুটিতে যাদের রেকর্ড অবসরের বহুদিন পরেও অটুট ছিল। তারপরে চার নম্বরে আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস, চুয়িং দাম চিবুতে চিবুতে একমুখ হাসি নিয়ে বিপক্ষের বোলিংকে তছনছ করে দিতে খুব কম ব্যাটসম্যানই পেরেছে সমগ্র ক্রিকেটের ইতিহাসে। ছিল গাস লোগির মত জাঁদরেল ফিল্ডার আর সবার ওপরে ছিল এক খতরনাক পেস ব্যাটারী, অ্যামব্রোস, মার্শাল, ওয়ালশ যারা গার্নার, হোল্ডিংয়ের বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলিংয়ের পরম্পরা সার্থকভাবেই বজায় রেখেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা মানেই ছিল একটা কী হয় কী হয় ভাব, আজ কে অন্য টিমকে দুরমুশ করবে সেটা জানার অপেক্ষা। 

এই সময়ের ঠিক পর পরই ক্রিকেটের ক্ষমতার কেন্দ্রটা বদলানো শুরু হয়ে গেল। একদিকে আবির্ভাব হল ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান চার্লস লারার, অন্যদিকে সব বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের অবসরের সময় ঘনিয়ে এল, গ্রিনিজ, হেনস, রিচার্ডস, মার্শাল একে একে সবাই বিদায় নিল নব্বইয়ের দশকে। ক্যারিবিয়ান ক্যালিপ্সো ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায় বর্তাল তরুণ লারা, রিচি রিচার্ডসন, হুপার ওয়ালশদের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখনো এক শক্তিশালী দল, লারা একাই বহু ম্যাচ জিতিয়ে গেছে, কিন্তু তারা সেই দুর্বার দল নয়, বরং অ্যালান বর্ডারের অসিরা উঠে এসেছে পয়লা নম্বরে যেই আধিপত্য চলবে স্টিভ ওয়া, রিকি পন্টিংয়ের হাত ঘুরে প্রায় বিশ বছর জুড়ে। 

ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতা দখল ছাড়াও আরো বেশ কিছু ঘটনা সেই একই সময়কালে ঘটছিল যা শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ না, গোটা বিশ্ব ক্রিকেটকেই চিরতরে বদলে দিয়েছিল। সত্তরের কেরী প্যাকার সিরিজ দিয়ে যে একদিনের ক্রিকেটের শুরু, নব্বইয়ের দশকে টেস্ট ক্রিকেটের থেকে মনোরঞ্জনের তালিকায় বিজয়ীর স্থানে চলে এসেছে সেই ওয়ান ডে। সমগ্র বিশ্বে সেই সময়ে যে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছিল যেমন সোভিয়েত জমানার পতন, দুই জার্মানির পুনর্যুক্তি, ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ, এবং এই বদলগুলোর সাথে বিশ্ব অর্থনীতির প্রসার সাধারন মানুষের জীবনেও এক স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। ফলে পাঁচ দিন ধরে সারাদিন ক্রিকেট দেখা বা রিলে শোনার মত সময় আর ধৈর্য্য কোনটাই খেটে খাওয়া মানুষের ছিলনা, যেখানে একদিনের ক্রিকেটের মত স্বল্পস্থায়ী বিনোদন বর্তমান। ফলে আস্তে আস্তে যোগ হতে লাগল রঙিন পোশাক, দিন-রাতের ম্যাচ ইত্যাদি। ব্যবসায় একটা কথা খুব প্রচলিত যে ক্রেতাই ঈশ্বর, যা ক্রিকেটে হল দর্শক, তাই যে পরিবর্তনগুলো আসছিল সবই ক্রিকেটকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য দর্শকদের কাছে। 

এই আমূল পরিবর্তনের সময়ে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা উঠে এসেছে প্রথম সারিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই সময়ে পিছলে যাচ্ছিল প্রধান থেকে সাধারন থেকে নিম্নমানের দলে। বদলে যাওয়া সময়ের সাথে নিজেদের বদলাবার জায়গায় খেলোয়াড় কর্মকর্তা সবাই জড়িয়ে পড়ল অন্তর্কলহে। যদিও জানতাম যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসলে ক্যারিবিয়ান সাগরে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দ্বীপরাষ্ট্রের এক যৌথ দল, এটা জানতাম না যে উত্তরে জামাইকা থেকে দক্ষিণে গায়ানা অবধি দ্বীপগুলোর বিস্তৃতি দু-তিন হাজার কিলোমিটার। ভৌগোলিক এই বিশাল ব্যবধান বিচার করলে এটাই পরম আশ্চর্যের যে বিগত চার-পাঁচ দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় এদের আধিপত্যের কী ব্যাখ্যা? প্র্যাকটিস করত কীভাবে, টিম সিলেকশন হত কীভাবে? ক্যারিবিয়ান দেশগুলির অর্থনীতি তেমন সবল নয়, পর্যটন ছাড়া মূল আয় প্রধানত কৃষিকাজ, সেখানে ক্রিকেট টিম স্থাপন আর চালানো এই বিশাল কর্মকান্ডের দায় কীভাবে বিভিন্ন দেশগুলো ভাগাভাগি করে নিত সেটা ভাবলেই অবাক লাগে। এই পরিকাঠামো বিচার করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যে অন্তর্দ্বন্ধ দেখা দিয়েছিল নয়ের দশকে, সেটা একসময় দেখা দিতই, দলের ফর্ম পড়ে যাওয়া এই বিবাদকে শুধু চাগিয়ে দিয়েছিল। 

নয়ের দশকে যে অবক্ষয়ের শুরু, নতুন মিলেনিয়ামে সেই চিড় ফাটলের আকার নিল। এই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরিনত হয়েছিল হাতে গোনা কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় সমৃদ্ধ এক অতি সাধারন দলে। চন্দ্রপল, সারওয়ান, ক্রিস গেইল ছাড়াও ছিল পড়তি সময়ের লারা। একুশ শতকের প্রথম দশ বছরে নতুন আমদানি হল ২০-২০ ক্রিকেট আর ক্লাবভিত্তিক আন্তর্জাতিক খেলা যেমন T20 বিশ্বকাপ, আইপিএল, সুপার কাপ ইত্যাদি। টেস্ট ক্রিকেটের গরিমা হয়তো ক্ষুন্ন হয়নি কিন্তু সাধারন দর্শকদের কাছে এ ছিল আরো একটা সহজলভ্য বিনোদন, তিন ঘন্টায় খেল খতম, আর বেশীরভাগ খেলাই দিন-রাতের তাই কাজেও তেমন ফাঁকি পড়বেনা। এই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে খেলোয়াড়দের বিবাদ, একজন স্থায়ী ক্যাপ্টেনের খামতি, ক্রিকেট বোর্ডের খেলোয়াড়দের মাইনে দিতে অস্বীকার এবং তার ফলস্বরূপ বেশ কিছু প্লেয়ারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে না খেলে ক্লাব দলের হয়ে খেলা। 

শেষের কারণটা ক্রিকেটের পক্ষে চরম দুর্ভাগ্যের। নতুন শতকে ক্রিকেটের এই দশা সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিম্বাবয়ে এই দেশগুলোর, যেখানে আর্থিক অনটন আর বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। এই দশ বছরে আইসিসি পর্যবসিত হয়েছিল রেভিনিউ কামানোর ইঁদুরদৌড়ে সামিল এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য কিন্তু বোর্ড নিজেদের অস্তিত্বের মূল কারন যা হল বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের প্রসার এবং খেলার মান আর উৎকর্ষতা বাড়ানো- সেটা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে কেবল উপার্জনের ওপর সব গুরুত্ব দিয়েছিল। সংস্থার দখল চলে গেল ক্রিকেটারদের থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে শুরু হয় বিস্তর কারচুপি, বিসিসিআই এর মত শক্তিশালী বোর্ডগুলোর নিজেদের সুবিধামত পেশী আস্ফালন, খেলার নিয়মকানুনের বদল যার উদ্দেশ্য খেলার মান বাড়ান নয় বরং আমানতকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির বানিজ্যিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। নব্বইয়ের সময়ে ওয়ান ডে খেলার রমরমা দেখে যারা কু গেয়েছিল যে আইসিসি ক্রিকেটকে বেসবলে পরিনত করার চেষ্টা করছে, আজকের ২০-২০ ক্রিকেটের বাড়তি দেখে হয় তাঁরা মুচকি হাসছেন নাহয় জিভের তলায় সরবিট্রেট রাখছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন শতকের এই সমীকরণে সফল হওয়া নিতান্তই অসম্ভব হয়ে পড়ল, বিশেষ করে যখন আয়োজক মাঠের আয়ের অধিকাংশই যাবে আইসিসির কোষে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলির মধ্যে একমাত্র জামাইকা ছাড়া অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর কারওই তেমন নেই তাই ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে বিবাদ-মতানৈক্য এসবের মূলে যে টাকাপয়সা জড়িয়ে, তা সন্দেহের ঊর্দ্ধে। ক্রিকেটের উৎকর্ষ বৃদ্ধির যূপকাষ্ঠে বলি হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিম্বাবয়ে এই দলগুলো যাদের শুধু খেলায় অংশগ্রহন করতেই অশেষ প্রতিকুলতার মোকাবিলা করতে হয়। আজকের দিনে এরা নিছকই কোল্যাটেরাল ড্যামেজ। 

বিগত দশ বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অধোগতির জন্য যে খেলোয়াড়দের দায়ী করা যায় তা নয়। হয়তো আশির দশকের বুক কাঁপানো ড্রিম টিম নয় কিন্তু এখনকার টিমে যে প্রতিভার ঘাটতি আছে তা নয়, যেটা অনুপস্থিত তা হল আত্মবিশ্বাস আর দলীয় সংহতি। তাছাড়া টিম এখন পুরোপুরি ক্রিস গেইল ভিত্তিক, গেইল ব্যর্থ তবু ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম সারির দলগুলোর সাথে জিতেছে সেই ঘটনা বিরল। একটা দলকে সঠিক পথে চালান করার জন্য শুধু পনের জনের একটা টিমই যথেষ্ট না আজকের দিনে। টিম ম্যানেজমেন্টও সমান গুরুত্বপূর্ণ ফিজিও কোচ থেকে শুরু করে অ্যানালিস্টরা পর্যন্ত, সেটা যদি বোর্ড সুষ্ঠুভাবে না চালাতে পারে তবে দলের সাফল্যে তার প্রভাব পড়বেই। 

এ তো গেল তত্বের কচকচি যা হয়তো উইকি ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু তার বাইরে আমার একটা যুক্তি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আজকের দুর্দশার পেছনে, খুব বিজ্ঞানসম্মত নয় তবু বলার প্রয়োজন মনে করলাম। সমগ্র ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ হল খুশী মানুষের দেশ, এখানে হাওয়ায় ছড়িয়ে আছে ক্যালিপ্সো, সোকা, রেগে। পেটে টান থাকলেও এখানে ঘাটতি নেই সুর্যের আলোর, নেই সোনালী বালির সমুদ্রতটের। এই পরিবেশে ক্রিকেট খেলাটা ছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে সোবার্স, লয়েড, রিচার্ডস, লারাদের - এদের ক্রিকেট জুড়ে রয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানো সেই ক্যালিপ্সোর ছন্দ। এই আবহাওয়ায় বড় হয়ে যখন খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃঢ় সত্যের সামনে দাঁড়ায় আর বাধ্য হয় তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবার, তার ফল হয় অত্যন্ত হতাশাজনক। মানুষ বদলে তৈরী হয় রোবোট, তার ভেতর থেকে সব ছন্দ যায় হারিয়ে। ঠিক যেমনটা হয়েছে ব্রাজিলের ফুটবলে, তারা এখন ইউরোপীয় ফুটবলের সিস্টেমের বশ, এদের মধ্যে সাম্বার কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। আর ঠিক তেমনভাবেই হারিয়ে গেছে ক্যালিপ্সো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট থেকে, যদি টাকার পেছনেই ছুটতে হয় তবে তো আছেই বেসবল, বাস্কেটবল আমেরিকায় খেলার হাতছানি। সেখানে নেই সেই চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর, সোনালী বীচ বা ঢেউয়ের গর্জন, রেগের ঢিমেতাল লয় বদলে যায় চিয়ারলিডারদের উদ্দাম টিনসেলের ঝলকানিতে, যেটা যদিও এখন জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট মাঠেও।

তবে সময়ের সাথে বদলায় সব কিছুই, অতীতকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে চলা যায়না। ধ্রুপদী ক্রিকেটের স্থান এক সময় মানুষের কাছে ছিল, আজ সেটা বিরল। পৃথিবীতে কোন খেলাই আজ কেবলমাত্র ভাল লাগার জন্য খেলা হয় না, কেউই আর অ্যামেচার নয়, খেলার সাথে জুড়ে গেছে আর্থিক সামাজিক বানিজ্যিক রাজনৈতিক স্বার্থ। অতীতের চোখ দিয়ে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে দেখতে গেলে হতাশা তো হবেই। পেশাদারিত্বের এই যুগে যেখানে এসেছে আরো অনেক প্রযুক্তি, সেখানে খেলার বা প্রতিযোগীতার গুণগত মান অনেক উঁচু হয়েছে খেলোয়াড়দের নিজস্বতার বিসর্জনে, আর খেলার আঙিনা এখন টিঁকে থাকার লড়াইয়ের যুদ্ধক্ষেত্র। এ যেন লামার্কের প্রতিপাদ্যের নির্মম উদাহরণ – হয় অভিযোজন নয় বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট পুরনো সেই সোনালী যুগের পুনরাবৃত্তি করতে পারে কিনা সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে। কিন্তু সেই ষাট থেকে আশির দশকের দুর্বার দিনগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকবে উইজডেন, আর কিছু ধুলিধুসরিত স্মৃতি যারা সেই সময়কে প্রত্যক্ষ করেছিল, আর সেইসব প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিচারণায়। তাদের মহাকাব্যিক বিবরণে তখনও দাপিয়ে বেড়াবে সোবার্স গার্নার মার্শাল রিচার্ডস লারারা, যদিওবা হয়তো সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট থাকবে সেই আগুনে বছরগুলি থেকে এক আলোকবর্ষ বিপ্রতীপে।