Showing posts with label memories. Show all posts
Showing posts with label memories. Show all posts

Friday, 17 April 2015

ব্লগ কেন লিখি

কেন ব্লগ লিখি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে মনে ভেসে ওঠে কয়েকটা সাল যেগুলো এই লেখালেখির পেছনে তাগিদ যুগিয়েছিল। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে থাকবে খানিকটা বিষাদ, খানিকটা লেখালেখির চিরকালের চাপা ইচ্ছা, কিছু অসামান্য অভিজ্ঞতা আর একটা খুন। হ্যাঁ খুনও, তবে সে প্রসঙ্গে আসবো যথাসময়ে। 

ছোটবেলা থেকেই বইয়ের পোকা হবার সুত্রে বিভিন্ন ধরনের লেখার সাথে পরিচয় হয়েছে বহুদিন ধরে। স্কুলে দেখতাম বন্ধুরা কবিতা গল্প লিখছে, স্কুলের পত্রিকায় ছাপাও হচ্ছে সেসব লেখা। মনে একরকম হিংসা থেকেই লেখার চেষ্টা করেছি কয়েকবার স্কুল জীবনে কিন্তু সে লেখা নিজে পড়ে নিজেরই পাতে দেবার যোগ্য নয় বলে মনে হয়েছে। আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছিলাম, কোন কাজ অন্যের থেকে দেখে হুবহু নকল করা বা সেই কাজকে ইম্প্রোভাইজ করে আরো নিখুঁত বানানো যতটা সহজ লাগে আমার, ততটাই কঠিন নিজে ভেবে কোন কিছু সম্পূর্ণ নতুন কিছু সৃষ্টি করা, তা সে গল্প কবিতাই হোক বা ছবি, গান, সুর। তাই ম্যাপ আঁকা যত সহজ মনে হয় আমার, তার চেয়ে ঢের কঠিন ঠেকে একটা কুকুর আঁকা। এসব থেকে একটা ধারনা মনে বদ্ধ হয়ে গেছিল যে আমি তেমন সৃষ্টিশীল (ক্রিয়েটিভ) নই। 

সে তো হল কিন্তু কেবল সৃষ্টিশীল মানুষেই যে লেখালেখি করে তা তো নয়। কাজের বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রিপোর্ট লেখা এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সেই রিপোর্ট লিখতে গিয়ে দেখলাম লেখার ধরনধারন মন্দ নয় আর যতটা সম্ভব ব্যাকরণে তেমন ভুলভ্রান্তিও নেই, অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে নিজের লেখা পড়ে নিজেই চমকে গেছি। সেই থেকে ইচ্ছা জেগেছিল গল্প কবিতার মত ক্রিয়েটিভ কিছু না পারলেও প্রবন্ধ, কোন ঘটনার বিবরন ইত্যাদি লেখার। কিন্তু কি নিয়ে লিখবো তা নিয়ে প্রচুর দ্বন্দ্ব ছিল মনে, তাই দুএকটা National Geographic এর তথ্যচিত্রের বিবরন লেখা ছাড়া তেমন কিছুই লেখালেখি করা হয়নি। 

বাড়িতে কম্পিউটার কেনার পর হাতে যখন পর্যাপ্ত সময়, দিনরাত আড্ডা মেরেও কাটছেনা, তখন দেখলাম দু চারজন বন্ধু ব্লগ বলে কি একটা লেখা শুরু করেছে। হুজুগে পড়ে একটা অ্যাকাউন্টও খুলে ফেললাম কিন্তু লেখা কিছুই হল না, যাকে বলে হাতে রইল পেনসিল। লেখা শুরু হল ২০০৭ এ যখন MBA পড়ার জন্য লেখার মান বাড়ানোর চাপ শুরু হল। হাবিজাবি বিষয় নিয়ে লিখে ফেললাম বেশ কয়েকখানা ব্লগ। ২০০৮ এর দু তিনটে লেখা মনে ধরল বেশ, লেখাগুলো অনেক সময় অতীতের স্মৃতিচারণ না হয় মনের ভাবনা, কিন্তু লেখার গতির চেয়ে মনে ধরল ভাবনা চিন্তাগুলো যেগুলো বেশ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট বলা যেতে পারে, lateral ভাবনার একটা ছোঁয়া ছিল ব্লগগুলোয়। ঠিক যেই সময় লেখাতে একটা ভরবেগ (momentum) আসছে সেই সময় চাঁটিবাঁটি গুটিয়ে রওনা দিলাম বিলেতে, পড়ার আর চাকরি খোঁজার চাপে মাথায় উঠল লেখালেখি। অবসর সময় বরাদ্দ হল ফুটবল আর নেট-এ সিনেমা গান ইত্যাদি। 

২০১০ সালটা অবশ্যই থাকবে লেখালেখি শুরু করার পেছনে রসদ জোগানোর জন্য। এই বছর শুরুর দিকে নতুন চাকরি জয়েন করলাম, মাথায় যে আকাশছোঁয়া বেতনের অলীক স্বপ্ন ঘুরছিল, সেটা শেষে ভেঙে চুরমার হল। পড়তে আসার সময় আত্মীয়রা জিজ্ঞেস করত কবে ফেরত যাবো, আমিও খুব জোরগলায় বলতাম এই পড়ার ধার শোধ হতে যতদিন লাগে দু তিন বছর এই যা। চাকরি শুরু করার পর দেখলাম পুরো আট বছরই লাগবে সব ঋণ শোধ করতে। তারপর কিছু সঞ্চয় করে ফেরত যেতে যেতে প্রায় বারো চৌদ্দ বছর। এই বহুদিন প্রবাসে থাকার কথা ভেবে ফ্রাস্ট্রু খেয়ে অবসর সময় মনে করার চেষ্টা করতাম হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো—কুস্টিয়া জলপাইগুড়ি এসপ্ল্যানেড কলেজ স্ট্রীট। 

পুরনো দিনগুলোকে এক জায়গায় সঞ্চয় করার ইচ্ছাটা এই সময়েই শুরু হয়। মনে হচ্ছিল স্মৃতিশক্তি তেমন জোরাল নেই আর, তাই ভুলে যাবার আগেই সব ঘটনাগুলোকে কোথাও লিখে রাখাটা দরকার। ২০১০ এর শেষের দিকে দুর্গাপুজায় বাড়ি গিয়ে সেই তাগিদ চরমে উঠল, ফিরে এলাম একরাশ স্মৃতি আর মনখারাপ নিয়ে, তবে সেইসাথে রীতিমত বদ্ধপরিকর হয়ে বাক্সভর্তি চার-পাঁচখানা ডাইরী আর গুচ্ছের জেল পেন সঙ্গে নিয়ে এলাম ডাইরীতে সব পুরনো স্মৃতিগুলোকে লিখবো বলে। তখনো জানতামনা যে সংসারী হব কিনা কোনদিন তবে মনে হত যেভাবে দিন বদলাচ্ছে হুহু করে, আমি জীবনে যা সব দেখেছি সেসব এখন একমাত্র মাথার মধ্যে ছাড়া হয়ত তার আর কোন চিহ্নই নেই। জানিনা কে পড়বে এইসব পুরনো দিনের লেখা কিন্তু অনেকটা ভবিষ্যতের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই ঠিক করলাম মনে যে সব ছোটবড় স্মৃতিগুলো জমে আছে সেগুলো লিখে রাখবো যাতে বয়সের সাথে এসব হারিয়ে না যায়। হয়তো অন্যদের চেয়ে আমার নিজের জন্যই শুরু করেছিলাম লেখাগুলো, যাতে পরে ভুলে গেলেও ডাইরী থেকে সেই মনিমুক্তোগুলো পুনরুদ্ধার করা যায়। বেশ তোড়জোড় করে লিখলাম কয়েক পাতা তারপর আবার যে কে সেই, সব উত্তেজনা নিমেষে উধাও। তবে রয়ে গেল ডাইরীগুলো মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দেবার জন্য যে এটা একটা প্রকল্প ছিল যেটা এখনো শুরু করা যায়। 

২০১৩ য় বিয়ের আগে আর পরে আমি আর জেনিফার অনেক জায়গায় ঘুরতে গেছিলাম আর সেই সুত্রে Tripadvisor এ বেশ কিছু রিভিউ লিখলাম হয় জায়গা না হয় রেস্টুরেন্টদের নিয়ে। সেটা চালিয়ে যাবার ইচ্ছা ২০১৪তে থাকলেও আমাদের জীবনে সোফিয়া আসার পর সময় শক্তি কোনটাই তেমন অবশিষ্ট ছিলনা। তবে তাগিদ একটা রয়ে গেছিল সব সময় যে সংসারের সাথে সাথে নিজের ব্যক্তিগত সময়টাও বজায় রাখা। ১৪র শেষের দিকে আবার সেই ইচ্ছাটা প্রবল হল, আর অনেক বিস্তারিত ভাবে লেখার পরিকল্পনা তৈরি হল – ভ্রমনের অভিজ্ঞতা ডাইরীতে আর Tripadvisor এ, অতীতের স্মৃতিগুলো ২০১০ এ কেনা সেই ডাইরীগুলোয়। এই প্ল্যানে লেখা মানেই বিবরণ, আবার সেই রিপোর্ট, বিষয়ভিত্তিক কোন কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে লেখার কোন ইচ্ছা তখনো জাগেনি। তবে নিজে হাতে ডাইরীতে লেখা বা Schaeffers, Mont Blanc জাতীয় কলম ব্যবহারের আশা যতটা ছিল, আমার অখাদ্য হাতের লেখা যা অনেক সময় আমি নিজেই পড়তে পারিনা সেটা অন্যে কিভাবে পড়বে সেই চিন্তা করে অন্য মাধ্যম নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলাম যেমন ব্লগ বা নিদেনপক্ষে কম্পিউটারে টাইপ করা। লেখা শুরুও হয়েছিল পুরোদমে, প্রথমে বিভিন্ন বেড়ানোর বিবরন দিয়ে নতুন কেনা ডাইরীতে। তবে আগেও যা হয়েছে, প্রচুর উদ্যম নিয়ে শুরু করলেও মাঝপথেই আবার ইতি হয়ে গেল যখন কাজের চাপে নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হল। 

যে কারনে লেখাটা শুরু করেছিলাম কিছু সালের কথা দিয়ে, তার প্রধান কারন হল ২০১৫ সাল যা লেখালেখির উৎসাহ উদ্দীপনা প্রেরণা সব কিছুর মুলে। ফেব্রুয়ারীর মাঝের দিকে গেলাম ফ্রান্স। অনেকদিনের আকাঙ্খা স্বপ্ন জড়িয়ে ছিল ফ্রান্স নিয়ে তাই সব খুঁটিনাটি বর্ণনা আর সেই বহুকালের জমে থাকা ইচ্ছেগুলো মনের থেকে মুক্ত করে কোথাও স্থায়ীভাবে জমা করাটা ছিল বাঞ্ছনীয়। সুতরাং আবার শুরু হল লেখা আর মাধ্যম যদিও প্ল্যানমাফিক হবার কথা ভ্রমনের ডাইরী, শেষে ঠিক করলাম ব্লগ, আর সাত বছর বাদে জুড়লো আরো দুখানা লেখা সেই পুরনো অ্যাকাউন্টে। সেখানেই হয়তো থেমে যেতাম, কিন্তু একটা মর্মান্তিক ঘটনা সব প্ল্যান পরিকল্পনা ঘেঁটে দিল। 

তারিখটাও মনে আছে, ২৬শে ফেব্রুয়ারী। ফ্রান্স যাত্রার ব্লগ সবে শেষ করেছি এমন সময় দেখি ফেসবুক উত্তাল ঢাকায় ঘটে যাওয়া এক সাম্প্রদায়িক খুন নিয়ে। নিহতের পরিচিতি তিনি ব্লগার, তাঁর লেখায় তিনি সব ধর্মের কুফল কুসংস্কার নিয়ে তুলোধোনা করতেন। বাস্তবিকভাবেই গোঁড়া অন্ধবিশ্বাসী অজ্ঞ কিছু লোকের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিষফোঁড়ার মত তাই তাঁকে চুপ করানো বা পুরো দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার পুন্যলাভের পিপাসু শহীদ পাওয়া বিরল ছিলনা। অভিজিৎ রায়কে আমি চিনতাম না, জীবিতাবস্থায় তাঁর লেখা হয়তো চোখে পড়ে থাকবে কিন্তু মনে গেঁথে থাকার মত কিছু মনে পড়ছেনা। সব ধর্মের প্রতি সমান অবজ্ঞা অবিশ্বাস থেকেই অনুভব করলাম অভিজিৎ যেমন ছিলেন তীব্র সোচ্চার বিরোধী, শুধু ধর্মই নয় অনেক প্রাতিষ্ঠানিক জড়দ্গবতাই তিনি ঝেড়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন বাঙালি মানস থেকে, যা আমার জীবনদর্শনের সঙ্গে সম্পূর্ন মানানসই। 

অভিজিতের কয়েকটা লেখা পড়ে দেখলাম তাঁর লেখার মধ্যে আমার ভাবনাচিন্তাগুলো প্রতিফলিত হতে। আমি সমাজ পাল্টানোর স্বপ্ন দেখি কিন্তু অভিজিৎ সেটা শুধু কল্পনায় সীমাবদ্ধ না রেখে কাজে রূপান্তর করতে শুরু করেছিলেন। প্রচুর আফশোষ রয়ে গেল যে তাঁকে ধর্মের ছুতোয় অকালে সরিয়ে দিল যে বাঙালীগুলো তারা যে  নিজের জাতীর পায়ে কুড়োল মারল সেটা বোঝার সামর্থ্য তাদের নেই। 

অভিজিতের খুন আমার সব ভাবনা চিন্তা মানসিকতাকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে গেল। কিছুদিন আগে একটা লেখা দেখেছিলাম ব্লগ লেখা কিভাবে একটা হুজুগ থেকে এখন লুপ্তপ্রায়। অভিজিৎ প্রমান করে দিয়ে গেলেন সেটা কতটা ভুল। অভিজিতের কাজকে অসম্মান না করেই বলছি, স্বপ্ন দেখলেও হাতেকলমে সমাজ বদলানোর লড়াই চালানোর মত দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, দুরদৃষ্টি, সময়, ত্যাগস্বীকার, বীক্ষা আমার নেই। আমি শখে লিখি অবসর সময়ে যা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু যতটুকু লিখি সেখানে স্মৃতি অভিজ্ঞতার পাশাপাশি নিজের ভাবনাচিন্তাগুলোরও জায়গা করে দেয়া যা আমার নিজের জীবনবোধের প্রতিচ্ছবি, সেটা সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক হয়ে দেখা দিল ২৬শে ফেব্রুয়ারীপ পর থেকে। অনেকক্ষেত্রেই এই জাতীয় লেখায় প্রসঙ্গটাই মুখ্য, যদিও লেখার ধার পাঠকদের আকর্ষিত করে আর সেটাও আকাঙ্খিত কিন্তু অপরিহার্য নয়। 

তাই তখন থেকে ঠিক করলাম ব্লগ লেখা চালিয়ে যাবো, কাউকে বাধ্য করবনা ফেসবুকের মত ঘাড় ধরে পড়ানোর জন্য, কিন্তু লেখা চালিয়ে যাব। আগের যা পরিকল্পনা ছিল সেটা পাল্টাবোনা কিন্তু লিখবো সামাজিক রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও বিশেষ করে যেখানে প্রসঙ্গগুলোর তাৎপর্য আমার কাছে অমুল্য। এর মাঝে ফেসবুকে ছোটখাট লেখায় বন্ধুরা উৎসাহ যুগিয়েছে তাদের ভাল লেগেছে বলে, সেটার গুরুত্বও কিছু কম নয়। কেউ পড়ে ভাল লেগেছে বললে সেটা লেখার তাগিদ বাড়াবে বটে কিন্তু সেটা না হলেও অন্তত একটা সন্তুষ্টি থাকবে যে ভবিষ্যতে পেছনের দিকে চাইলে দেখতে পাব এই লেখাগুলো যাতে জুড়ে থাকবে একটা প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ যেটা এখন হয় আগের লেখাগুলো দেখে। এই প্রসঙ্গে এখানেই কলম থুড়ি কীবোর্ড থামালাম তবে আশা রাখবো যে উদ্যোগ নিয়ে শুরু করেছি সেটা বজায় থাকবে সপ্তা, মাসের গন্ডি ছাড়িয়ে বছরের দিকে…

Sunday, 29 March 2015

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট: এক ঝরা সময়ের ছবি

ছোটবেলার কথা মনে পড়লে খেলাধুলোর কথা যখন ভাবি প্রথমে ফুটবলের কথাই মনে আসে। আটের দশকে কলকাতা ফুটবলের রমরমা তখনো জারি। খবরের কাগজ, রেডিয়ো খুললেই ফুটবলের আলোচনা, রিলে ছাড়া কথা নেই। কৃশানু বিকাশ শিশির সুব্রত ছাড়াও নতুন আমদানি চিমা, তাছাড়া বারপুজো, দলবদল এসব নিয়েই বাজার গরম। ক্রিকেটের সাথে তখনো তেমন পরিচয় হয়নি, যদিও ভারত ততদিনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। কখনো সখনও ব্যাটবল খেলা (জানতাম না সেটাকেই ক্রিকেট বলে) আর গাভাসকর কপিলদেব অমরনাথ এইকটা নাম, এগুলোই ছিল ক্রিকেটজ্ঞান। এছাড়া ইডেনে খেলা পড়লে কলকাতা ক'য়ে রিলে "রান হয়ে গেছে নয় নয় করে…" বা "বল পাঠিয়ে দিলেন পত্রপাঠ সীমানার বাইরে" বাক্যগুলো প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে। তবে আর একটা ব্যাপার জানতাম যা ছাড়া তখন ক্রিকেট ভাবা যেতো না সেটা হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 


এখন মনস্তাত্বিকরা মনে করে যে আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভাল লাগার পেছনে জুড়ে আছে ঔপনিবেশিক সত্তা, সাদা চামড়ার দেশগুলোর ওপর ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কালো মানুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখে নিজেদের ঔপনিবেশিক বঞ্চনার পরোক্ষ বদলা মনে করা। আমার ঐ বয়সে অত গুরুগম্ভীর ভাবনাচিন্তা করার বিষয় সেটা ছিলনা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের তখনকার লাইনআপ আর ফর্ম দেখেই মনে সম্ভ্রম জাগা স্বাভাবিক। ইনিংস শুরু করছে গর্ডন গ্রিনিজ আর ডেসমন্ড হেনস, ওপেনিং জুটিতে যাদের রেকর্ড অবসরের বহুদিন পরেও অটুট ছিল। তারপরে চার নম্বরে আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেকজান্ডার রিচার্ডস, চুয়িং দাম চিবুতে চিবুতে একমুখ হাসি নিয়ে বিপক্ষের বোলিংকে তছনছ করে দিতে খুব কম ব্যাটসম্যানই পেরেছে সমগ্র ক্রিকেটের ইতিহাসে। ছিল গাস লোগির মত জাঁদরেল ফিল্ডার আর সবার ওপরে ছিল এক খতরনাক পেস ব্যাটারী, অ্যামব্রোস, মার্শাল, ওয়ালশ যারা গার্নার, হোল্ডিংয়ের বিখ্যাত (বা কুখ্যাত) ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলিংয়ের পরম্পরা সার্থকভাবেই বজায় রেখেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা মানেই ছিল একটা কী হয় কী হয় ভাব, আজ কে অন্য টিমকে দুরমুশ করবে সেটা জানার অপেক্ষা। 

এই সময়ের ঠিক পর পরই ক্রিকেটের ক্ষমতার কেন্দ্রটা বদলানো শুরু হয়ে গেল। একদিকে আবির্ভাব হল ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান চার্লস লারার, অন্যদিকে সব বাঘা বাঘা খেলোয়াড়দের অবসরের সময় ঘনিয়ে এল, গ্রিনিজ, হেনস, রিচার্ডস, মার্শাল একে একে সবাই বিদায় নিল নব্বইয়ের দশকে। ক্যারিবিয়ান ক্যালিপ্সো ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায় বর্তাল তরুণ লারা, রিচি রিচার্ডসন, হুপার ওয়ালশদের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখনো এক শক্তিশালী দল, লারা একাই বহু ম্যাচ জিতিয়ে গেছে, কিন্তু তারা সেই দুর্বার দল নয়, বরং অ্যালান বর্ডারের অসিরা উঠে এসেছে পয়লা নম্বরে যেই আধিপত্য চলবে স্টিভ ওয়া, রিকি পন্টিংয়ের হাত ঘুরে প্রায় বিশ বছর জুড়ে। 

ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতা দখল ছাড়াও আরো বেশ কিছু ঘটনা সেই একই সময়কালে ঘটছিল যা শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজ না, গোটা বিশ্ব ক্রিকেটকেই চিরতরে বদলে দিয়েছিল। সত্তরের কেরী প্যাকার সিরিজ দিয়ে যে একদিনের ক্রিকেটের শুরু, নব্বইয়ের দশকে টেস্ট ক্রিকেটের থেকে মনোরঞ্জনের তালিকায় বিজয়ীর স্থানে চলে এসেছে সেই ওয়ান ডে। সমগ্র বিশ্বে সেই সময়ে যে সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটছিল যেমন সোভিয়েত জমানার পতন, দুই জার্মানির পুনর্যুক্তি, ভারতের অর্থনৈতিক উদারীকরণ, এবং এই বদলগুলোর সাথে বিশ্ব অর্থনীতির প্রসার সাধারন মানুষের জীবনেও এক স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। ফলে পাঁচ দিন ধরে সারাদিন ক্রিকেট দেখা বা রিলে শোনার মত সময় আর ধৈর্য্য কোনটাই খেটে খাওয়া মানুষের ছিলনা, যেখানে একদিনের ক্রিকেটের মত স্বল্পস্থায়ী বিনোদন বর্তমান। ফলে আস্তে আস্তে যোগ হতে লাগল রঙিন পোশাক, দিন-রাতের ম্যাচ ইত্যাদি। ব্যবসায় একটা কথা খুব প্রচলিত যে ক্রেতাই ঈশ্বর, যা ক্রিকেটে হল দর্শক, তাই যে পরিবর্তনগুলো আসছিল সবই ক্রিকেটকে আরো জনপ্রিয় করে তোলার জন্য দর্শকদের কাছে। 

এই আমূল পরিবর্তনের সময়ে যেমন দক্ষিণ আফ্রিকা উঠে এসেছে প্রথম সারিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই সময়ে পিছলে যাচ্ছিল প্রধান থেকে সাধারন থেকে নিম্নমানের দলে। বদলে যাওয়া সময়ের সাথে নিজেদের বদলাবার জায়গায় খেলোয়াড় কর্মকর্তা সবাই জড়িয়ে পড়ল অন্তর্কলহে। যদিও জানতাম যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসলে ক্যারিবিয়ান সাগরে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দ্বীপরাষ্ট্রের এক যৌথ দল, এটা জানতাম না যে উত্তরে জামাইকা থেকে দক্ষিণে গায়ানা অবধি দ্বীপগুলোর বিস্তৃতি দু-তিন হাজার কিলোমিটার। ভৌগোলিক এই বিশাল ব্যবধান বিচার করলে এটাই পরম আশ্চর্যের যে বিগত চার-পাঁচ দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় এদের আধিপত্যের কী ব্যাখ্যা? প্র্যাকটিস করত কীভাবে, টিম সিলেকশন হত কীভাবে? ক্যারিবিয়ান দেশগুলির অর্থনীতি তেমন সবল নয়, পর্যটন ছাড়া মূল আয় প্রধানত কৃষিকাজ, সেখানে ক্রিকেট টিম স্থাপন আর চালানো এই বিশাল কর্মকান্ডের দায় কীভাবে বিভিন্ন দেশগুলো ভাগাভাগি করে নিত সেটা ভাবলেই অবাক লাগে। এই পরিকাঠামো বিচার করলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যে অন্তর্দ্বন্ধ দেখা দিয়েছিল নয়ের দশকে, সেটা একসময় দেখা দিতই, দলের ফর্ম পড়ে যাওয়া এই বিবাদকে শুধু চাগিয়ে দিয়েছিল। 

নয়ের দশকে যে অবক্ষয়ের শুরু, নতুন মিলেনিয়ামে সেই চিড় ফাটলের আকার নিল। এই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পরিনত হয়েছিল হাতে গোনা কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় সমৃদ্ধ এক অতি সাধারন দলে। চন্দ্রপল, সারওয়ান, ক্রিস গেইল ছাড়াও ছিল পড়তি সময়ের লারা। একুশ শতকের প্রথম দশ বছরে নতুন আমদানি হল ২০-২০ ক্রিকেট আর ক্লাবভিত্তিক আন্তর্জাতিক খেলা যেমন T20 বিশ্বকাপ, আইপিএল, সুপার কাপ ইত্যাদি। টেস্ট ক্রিকেটের গরিমা হয়তো ক্ষুন্ন হয়নি কিন্তু সাধারন দর্শকদের কাছে এ ছিল আরো একটা সহজলভ্য বিনোদন, তিন ঘন্টায় খেল খতম, আর বেশীরভাগ খেলাই দিন-রাতের তাই কাজেও তেমন ফাঁকি পড়বেনা। এই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট লক্ষ্য করলে দেখা যাবে খেলোয়াড়দের বিবাদ, একজন স্থায়ী ক্যাপ্টেনের খামতি, ক্রিকেট বোর্ডের খেলোয়াড়দের মাইনে দিতে অস্বীকার এবং তার ফলস্বরূপ বেশ কিছু প্লেয়ারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে না খেলে ক্লাব দলের হয়ে খেলা। 

শেষের কারণটা ক্রিকেটের পক্ষে চরম দুর্ভাগ্যের। নতুন শতকে ক্রিকেটের এই দশা সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিম্বাবয়ে এই দেশগুলোর, যেখানে আর্থিক অনটন আর বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট। এই দশ বছরে আইসিসি পর্যবসিত হয়েছিল রেভিনিউ কামানোর ইঁদুরদৌড়ে সামিল এক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য কিন্তু বোর্ড নিজেদের অস্তিত্বের মূল কারন যা হল বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটের প্রসার এবং খেলার মান আর উৎকর্ষতা বাড়ানো- সেটা সম্বন্ধে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে কেবল উপার্জনের ওপর সব গুরুত্ব দিয়েছিল। সংস্থার দখল চলে গেল ক্রিকেটারদের থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে শুরু হয় বিস্তর কারচুপি, বিসিসিআই এর মত শক্তিশালী বোর্ডগুলোর নিজেদের সুবিধামত পেশী আস্ফালন, খেলার নিয়মকানুনের বদল যার উদ্দেশ্য খেলার মান বাড়ান নয় বরং আমানতকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির বানিজ্যিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা। নব্বইয়ের সময়ে ওয়ান ডে খেলার রমরমা দেখে যারা কু গেয়েছিল যে আইসিসি ক্রিকেটকে বেসবলে পরিনত করার চেষ্টা করছে, আজকের ২০-২০ ক্রিকেটের বাড়তি দেখে হয় তাঁরা মুচকি হাসছেন নাহয় জিভের তলায় সরবিট্রেট রাখছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন শতকের এই সমীকরণে সফল হওয়া নিতান্তই অসম্ভব হয়ে পড়ল, বিশেষ করে যখন আয়োজক মাঠের আয়ের অধিকাংশই যাবে আইসিসির কোষে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলির মধ্যে একমাত্র জামাইকা ছাড়া অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আর কারওই তেমন নেই তাই ক্রিকেট বোর্ডগুলোর মধ্যে বিবাদ-মতানৈক্য এসবের মূলে যে টাকাপয়সা জড়িয়ে, তা সন্দেহের ঊর্দ্ধে। ক্রিকেটের উৎকর্ষ বৃদ্ধির যূপকাষ্ঠে বলি হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিম্বাবয়ে এই দলগুলো যাদের শুধু খেলায় অংশগ্রহন করতেই অশেষ প্রতিকুলতার মোকাবিলা করতে হয়। আজকের দিনে এরা নিছকই কোল্যাটেরাল ড্যামেজ। 

বিগত দশ বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের অধোগতির জন্য যে খেলোয়াড়দের দায়ী করা যায় তা নয়। হয়তো আশির দশকের বুক কাঁপানো ড্রিম টিম নয় কিন্তু এখনকার টিমে যে প্রতিভার ঘাটতি আছে তা নয়, যেটা অনুপস্থিত তা হল আত্মবিশ্বাস আর দলীয় সংহতি। তাছাড়া টিম এখন পুরোপুরি ক্রিস গেইল ভিত্তিক, গেইল ব্যর্থ তবু ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম সারির দলগুলোর সাথে জিতেছে সেই ঘটনা বিরল। একটা দলকে সঠিক পথে চালান করার জন্য শুধু পনের জনের একটা টিমই যথেষ্ট না আজকের দিনে। টিম ম্যানেজমেন্টও সমান গুরুত্বপূর্ণ ফিজিও কোচ থেকে শুরু করে অ্যানালিস্টরা পর্যন্ত, সেটা যদি বোর্ড সুষ্ঠুভাবে না চালাতে পারে তবে দলের সাফল্যে তার প্রভাব পড়বেই। 

এ তো গেল তত্বের কচকচি যা হয়তো উইকি ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু তার বাইরে আমার একটা যুক্তি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের আজকের দুর্দশার পেছনে, খুব বিজ্ঞানসম্মত নয় তবু বলার প্রয়োজন মনে করলাম। সমগ্র ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ হল খুশী মানুষের দেশ, এখানে হাওয়ায় ছড়িয়ে আছে ক্যালিপ্সো, সোকা, রেগে। পেটে টান থাকলেও এখানে ঘাটতি নেই সুর্যের আলোর, নেই সোনালী বালির সমুদ্রতটের। এই পরিবেশে ক্রিকেট খেলাটা ছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এভাবেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেয়েছে সোবার্স, লয়েড, রিচার্ডস, লারাদের - এদের ক্রিকেট জুড়ে রয়েছে বাতাসে ভেসে বেড়ানো সেই ক্যালিপ্সোর ছন্দ। এই আবহাওয়ায় বড় হয়ে যখন খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দৃঢ় সত্যের সামনে দাঁড়ায় আর বাধ্য হয় তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবার, তার ফল হয় অত্যন্ত হতাশাজনক। মানুষ বদলে তৈরী হয় রোবোট, তার ভেতর থেকে সব ছন্দ যায় হারিয়ে। ঠিক যেমনটা হয়েছে ব্রাজিলের ফুটবলে, তারা এখন ইউরোপীয় ফুটবলের সিস্টেমের বশ, এদের মধ্যে সাম্বার কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই। আর ঠিক তেমনভাবেই হারিয়ে গেছে ক্যালিপ্সো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট থেকে, যদি টাকার পেছনেই ছুটতে হয় তবে তো আছেই বেসবল, বাস্কেটবল আমেরিকায় খেলার হাতছানি। সেখানে নেই সেই চোখ ধাঁধানো রোদ্দুর, সোনালী বীচ বা ঢেউয়ের গর্জন, রেগের ঢিমেতাল লয় বদলে যায় চিয়ারলিডারদের উদ্দাম টিনসেলের ঝলকানিতে, যেটা যদিও এখন জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট মাঠেও।

তবে সময়ের সাথে বদলায় সব কিছুই, অতীতকে আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে চলা যায়না। ধ্রুপদী ক্রিকেটের স্থান এক সময় মানুষের কাছে ছিল, আজ সেটা বিরল। পৃথিবীতে কোন খেলাই আজ কেবলমাত্র ভাল লাগার জন্য খেলা হয় না, কেউই আর অ্যামেচার নয়, খেলার সাথে জুড়ে গেছে আর্থিক সামাজিক বানিজ্যিক রাজনৈতিক স্বার্থ। অতীতের চোখ দিয়ে বর্তমান আর ভবিষ্যতকে দেখতে গেলে হতাশা তো হবেই। পেশাদারিত্বের এই যুগে যেখানে এসেছে আরো অনেক প্রযুক্তি, সেখানে খেলার বা প্রতিযোগীতার গুণগত মান অনেক উঁচু হয়েছে খেলোয়াড়দের নিজস্বতার বিসর্জনে, আর খেলার আঙিনা এখন টিঁকে থাকার লড়াইয়ের যুদ্ধক্ষেত্র। এ যেন লামার্কের প্রতিপাদ্যের নির্মম উদাহরণ – হয় অভিযোজন নয় বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট পুরনো সেই সোনালী যুগের পুনরাবৃত্তি করতে পারে কিনা সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে। কিন্তু সেই ষাট থেকে আশির দশকের দুর্বার দিনগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকবে উইজডেন, আর কিছু ধুলিধুসরিত স্মৃতি যারা সেই সময়কে প্রত্যক্ষ করেছিল, আর সেইসব প্রত্যক্ষদর্শীদের স্মৃতিচারণায়। তাদের মহাকাব্যিক বিবরণে তখনও দাপিয়ে বেড়াবে সোবার্স গার্নার মার্শাল রিচার্ডস লারারা, যদিওবা হয়তো সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট থাকবে সেই আগুনে বছরগুলি থেকে এক আলোকবর্ষ বিপ্রতীপে।