Showing posts with label ping pong. Show all posts
Showing posts with label ping pong. Show all posts

Monday, 16 November 2015

টেবিল টেনিস, অথবা নিছক ভুতের গল্প

সেটা ১৯৯৭ সালের কথা, তখন জলপাইগুড়িতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি প্রথম বর্ষে। বসন্ত কাল, পরীক্ষা-টরীক্ষা নেই কাছেপিঠে, হাতে তাই অফুরন্ত সময়। যারা প্রাকৃতিক দৃশ্য ভালবাসে, আমাদের ক্যাম্পাসটা তাদের জন্যে সোনায় সোহাগার মত। উত্তর দিকটা জুড়ে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান, সেদিকে তাকালে যতদুর চোখ যায় সবুজ আর সবুজ, আর বাগানের বুক চিরে চলে গেছে রেললাইন উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর দিকে। পশ্চিম জুড়েও চাবাগান দুরে, তার আগে করলা নদীর ওপর রেলব্রিজ। ক্যাম্পাসের পশ্চিম আর পূর্ব দিক দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে করলা আর রুকরুকা দুই নদী। বসন্তকালে চা বাগানের দিক থেকে বয়ে আসে দারুন মৃদুমন্দ হাওয়া, উত্তর দিকে ডুয়ার্স আর তার ওপরে পূর্ব হিমালয়ের হাতছানি নিয়ে। যে রাতটার হাড় হিম করা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা এখন লিখতে যাচ্ছি তার জন্যে এই বসন্ত কালের পরিবেশ ছিল আদর্শ পটভূমিকা।
আমাদের এক নম্বর হোস্টেলের একতলায় উত্তরের দিকে ছিল একটা বড় কমন রুম, যেখানে হোস্টেলের সবাই সময় কাটাতে আসত। কমন রুমে ছিল একটা কালার টিভি, গোটা তিন ক্যারাম বোর্ড আর সেই লিস্টে নতুন আমদানি একটা ঝাঁ চকচকে টেবিল টেনিস বোর্ড। কমন রুমের দরজার উল্টোদিকের দেয়ালে, টিভি স্ট্যান্ডের পাশে আরেকটা ছোটমত দরজা। সেই দরজার পেছনে একটা ছোট্ট ঘর, আমরা বলতাম নিউজ রুম। সে ঘরে ছিল খালি একটা দেয়াল জোড়া বড় টেবিল আর দুপাশে দু সারি বেঞ্চি। নিউজ রুমের পেছনের দেয়াল জুড়ে খড়খড়ি দেয়া জানলা, যেখানে তাকালে তিন নম্বর হোস্টেলের রাস্তা তার পর থেকে চা বাগান শুরু। নিউজ রুমটা ছিল হোস্টেলের পড়ুয়া ছেলেদের খবরের কাগজ পড়ার জায়গা। ঘরটা খোলা হতো ১২টা থেকে ৪-৫টা অবধি, শনি রবিবার আরেকটু আগে থেকে। তবে খুব বেশি লোকজন যে ব্যগ্র ছিল সারা বিশ্বের খবর জানার জন্যে তা বললে ভুল হবে। ঘরটা বেশির ভাগ সময় ফাঁকাই থাকত।
যে সালটার কথা বলছি সে বছর টেবিল টেনিস খেলার একটা ধুম পড়েছিল হোস্টেলের ছাত্রদের মধ্যে। স্পোর্টস ফান্ডের টাকায় এলো নতুন বোর্ড, তার সাথে বেশ কিছু নতুন ব্যাটও। আমরা ফার্স্ট ইয়াররা থাকতাম থার্ড ইয়ারের ছেলেদের সাথে, কাজেই কমন রুমে একটা অলিখিত নিয়ম ছিল যে থার্ড ইয়ারের ছেলেরা খেলা, টিভির সামনে সিট এসবে প্রথম চান্স পাবে। টেবিল টেনিসেও তাই লম্বা লাইন পড়ত খেলার জন্যে, সেখানে থার্ড ইয়ারের ছেলেদেরই অগ্রাধিকার, যদিনা কেউ দয়া করে ফার্স্ট ইয়ারের কুচোকাঁচাদের একটা গেম খেলতে দিতো। ফার্স্ট ইয়াররা খেলার চান্স পেত রাতের দিকে যখন সিনিয়াররা পরের দিনের সেশনাল বা ব্রিজের আসর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ত। আমার রুমমেট ছিল তথা – তথাগত বামুন, আমরা দুজনেই টেবিল টেনিস খেলার জন্যে খুব উৎসাহী ছিলাম কিন্তু রোজ রোজ অনেক রাত অবধি অপেক্ষা করেও খুচরো এদিক ওদিক এক-আধটা গেম ছাড়া কপাল খোলেনি। আমাদের তিন নম্বর রুমমেট বিক্রম ছিল তুখোড় টেবিল টেনিস খেলুড়ে তাই শেখার গরজটা আমাদেরই  বেশি ছিল। 
ঘটনার সূত্রপাত এরকমই এক রাতে যখন আমরা ঠিক করলাম যে যথেষ্ট হয়েছে সেই রাতে এসপার-ওসপার হয়ে যাবে। পরদিন ক্লাস থাকা সত্ত্বেও ঠিক করলাম যত দেরিই হোক না কেন সে রাতে কমন রুম ফাঁকা হওয়া অবধি অপেক্ষা করব তারপর টানা যতক্ষণ ইচ্ছে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাব। প্ল্যান যে কাজ করছে সেটা বোঝা গেল সাড়ে এগারোটা নাগাদ কমন রুম ফাঁকা হতে শুরু করায়। ক্যারম বোর্ডের আলোগুলো একে একে নিভতে শুরু করলো, বোর্ড ঢাকা পড়ল নেভি ব্লু কভারে। টিভি তখনও চলছিল তবে দেখার লোক বলতে গোটা দুই। হাতে গোনা কয়েকজন ফার্স্ট ইয়ার রয়ে গেলাম টেবিল টেনিস খেলার জন্যে। প্রতিটা গেমের পর অন্যদের সাথে হাত বদল করছিলাম কিন্তু সবাই আনাড়ি তাই একটা গেম পাঁচ দশ মিনিটও টিকছিল না। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শেষ জুড়ি ঘুমোতে চলে গেল, রয়ে গেলাম তথা আর আমি। ফাঁকা কমন রুম, টেবিল টেনিস বোর্ডের মাথার ওপর টিমটিম করে জ্বলা আলো, আলো-আঁধারী তার মাঝে চুটিয়ে শুরু হলো দুই আনাড়ির টেবিল টেনিস প্র্যাকটিস।
ঠকাঠক ঠকাঠক। ব্যাট আর বলের আওয়াজ প্রথমে কানে না আসলেও খানিকক্ষণ পর শব্দটা একঘেয়ে বিরক্তিকর লাগতে শুরু করলো। অনেকে বলে টেবিল টেনিস খেলাটা সবচেয়ে কঠিন, রিফ্লেক্স খুব ধারালো না হলে এ খেলা রপ্ত করা কঠিন। কিছুক্ষণ খেলার পর সেটা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করলাম। হাত পা শরীরচর্চার অভাবে ঝনঝন করছে, তবু জেদের বশে চলতে থাকলো রেলি। ঘড়ির কাঁটাগুলো একবগ্গা ঘুরে ঘুরে সময় বয়ান করতে লাগলো একটা দেড়টা দুটো, আমাদের খেলার উৎসাহে ক্ষান্তি পড়লনা তবুও। নিশিগ্রস্ত মানুষদের মত আমি আর তথা চালিয়ে যেতে লাগলাম সার্ভ স্লাইস স্ম্যাশ। আমি খেলছিলাম কমন রুমের পেছনের দেয়ালের দিক থেকে, আর তথা ছিল দরজার দিকে। আমি যতবার জিতছিলাম রেলিতে বলটা গড়িয়ে গড়িয়ে কমন রুমের বাইরে চলে যাচ্ছিল তাই দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে আবার শুরু হলো প্র্যাকটিস।
আমাদের একঘেয়েমি ভাঙলো তথা সার্ভ করতে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ানোয়। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে ও আমার পেছনের দেয়ালের দিকে কিছু একটা দেখছে। একে এত রাত তার ওপর সময় নষ্ট, জিজ্ঞাসা করলাম
 – কিরে সার্ভ করছিসনা কেন? থামলি কি কারণে?
চোখ না সরিয়ে তথা উত্তর দিল
– মনে হলো কিছু একটা যেন নড়ছিল ঐ দরজাটার দিকে।
তথার আঙ্গুল নিউজ রুমের দরজার দিকে নির্দেশ করছে।
– ধুর ওখানে আবার কি নড়বে। পোকামাকড় হবে। 
– তাই হবে। হয়ত ল্যাম্পের আলোটা কোথাও রিফ্লেক্ট করে চোখে পড়েছে। 
আবার শুরু করলাম খেলা কিন্তু ঠিক করলাম যে তিনটে গেম খেলব কে জিতবে ঠিক করার জন্যে, তারপর রুমে ফিরে যাব। 
প্রথম গেমের মাঝপথে তথা একটা স্ম্যাশ মারলো, সেটা ফেরাতে পারলামনা, বলটা গড়িয়ে চলে গেল কমন রুমের পেছন দিকে, টিভি আর নিউজ রুমের কোনটায়। বল কুড়িয়ে ফিরে আসছি হঠাৎ চোখ তুলে তথার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। ও আবার আমার পেছনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে, চোখ বিস্ফারিত খানিকটা বিস্ময় খানিকটা আতঙ্ক জুড়ে ওর মুখে চোখে। ছোটবেলা থেকে গাদা গুচ্ছের বই পড়ে পড়ে রজ্জুতে সর্পভ্রম আমার স্বভাব, তাই ছোটখাটো ঘটনাকেও মনে মনে তিলকে তাল করে ভয় পাওয়া আমার কাছে নতুন কিছু নয়। তবু সেই রাত্রে তথাকে ওভাবে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার। যতই ঘাবড়ে যাইনা কেন, এই মুহূর্তগুলোতে অ্যাড্রিনালিন শরীরকে হঠাৎ সজাগ করে দেয়। সময় থমকে দাঁড়ায় সব ঘটনাবলী বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ানোর জন্যে। মাথা তখন লজিক খুঁজতে শুরু করে, অলীক কান্ডকারখানায় তার তখন কোনো আগ্রহ নেই। সেরকমই সেই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে তথার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম 
– কিরে আবার কি হলো?
– নিউজ রুমের তালাটা নড়ছিল।
– ধুর কি যা তা বলছিস।  তালা আবার নড়বে কি করে? আলো রিফ্লেক্ট করেছে সেটাই দেখেছিস হয়ত। 
ভেবেছিলাম তথা বলবে আমার পেছনে কেউ ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সেটা বললে প্রাণ খাঁচাছাড়া হয়ে যেত। ও যখন বলল তালা নড়ছে, মনে আবার স্বস্তি ফিরে পেলাম। তালা আবার কি নড়বে! খানিক বীরপুরুষের মত যাচাই করে দেখার জন্যে ফিরে গেলাম দরজার কাছে। নতুন স্টেনলেস স্টিলের তালা দরজার কড়া থেকে ঝুলছে। নড়াচড়ার কোনো চিহ্ন নেই। তবে হ্যাঁ টেবিল টেনিসের টেবিল থেকে এদিকটা দেখতে যেমন লাগছিল এখন দরজার সামনে আলো আঁধারীতে দাঁড়িয়ে চারপাশের অন্ধকারটা যেন একটু বেশিই গাঢ় মনে হচ্ছে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কোনো ইচ্ছেই নেই ওই ভুতুড়ে ছায়া আবছায়া ঘেরা কোনে, তাই তথাকে হেঁকে বললাম 
– দেখ তালা যে কে সেই কিচ্ছু নড়ছেনা এখানে। ভুল দেখেছিস। চল এই গেমটা শেষ করে শুতে যাই, অনেক রাত হলো। 
তথাও দেখলাম নিশ্চিন্ত যে চাক্ষুষ যাচাই করে নিয়েছি আমরা তালা নড়ছেনা।
ফেরার জন্যে সবে দুই পা বাড়িয়েছি হঠাৎ তথা বেশ জোরে অথচ আতঙ্কগ্রস্ত চাপা গলায় বলে উঠলো 
– হনু ওই আবার নড়ছে। 
এত চেষ্টা চরিত্র করে মনটাকে যে শান্ত করেছিলাম সেটা আবার নিমেষে উধাও হয়ে গেল। যেন ছুরিওলা আততায়ী আবার আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। গায়ের তো সব লোম খাড়া হয়ে গেছে ঘামে ভেজা হওয়া সত্ত্বেও। নাড়ি দৌড়চ্ছে উর্ধশ্বাসে, তবু কোনমতে মনে জোর এনে আবার বললাম 
– নড়ছে মানে? ইয়ার্কি মারছিস না তো এত রাতে?
– মাকালীর দিব্যি।  ওই দেখ আবার নড়ছে তালাটা সরে আয় তাড়াতাড়ি। 
এটা শুনেই হাড় হিম হয়ে গেল আমার। কমন রুমে খালি আমি আর তথা দুজনেই পনের বিশ ফুট দুরে যখন তথা প্রথম বার দেখতে পেয়েছিল। তালাটা যদি নিজে নিজে নড়ে তাহলে সেটা যে ভৌতিক কান্ড তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তা সত্ত্বেও পালাবার আগে একবার দেখে নেয়ার উৎকন্ঠা সামলাতে পারলামনা। পেছন ঘুরে দাঁড়ালাম নিউজ রুমের দরজার সামনে। তালা আবার আগের মত ঝুলছে, নড়ার কোনো চিহ্নই নেই। বামুনকে খিস্তি মারব বলে ঘুরতে যাচ্ছি ঠিক সেই সময় চোখের সামনে যা ঘটল তার বর্ণনা এখনো পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে রয়েছে। তালার থেকে আমার চোখ হয়ত পাঁচ ফুট হবে মেরেকেটে, অত কাছ থেকে ভুল দেখা সম্ভব নয়। তালাটা যেন হঠাৎ কোনো জাদুমন্ত্রে প্রাণ ফিরে পেল। প্রথমে একটু নড়ে উঠলো, তারপর তলার হুকের দিকটা কড়ার মধ্যে থাকলেও তাকে কেন্দ্র করে তালার মেন বডিটা ঘুরে উপরের দিকে উঠতে লাগলো – প্রথমে আসতে আসতে, তারপর বেশ তাড়াতাড়িই। তালা যখন থামল তার যাত্রা শেষ করে, চাবির দিকটা আমার চোখের সামনে। চাক্ষুষ একটা তালা ঘুরে নিচের দিকটা উপরে হয়ে দাঁড়িয়ে, নিউটন সাহেবের মাধ্যাকর্ষণ নস্যাৎ করে। 
আমাদের জীবনে এরকম অনেক মুহূর্ত আসে যেগুলো কখনো চেষ্টা করেও ভোলা যায়না। ৯৭য়ের সেই রাত্রির সেই মুহুর্তটাও সেরকমই এক ক্ষণ যখন নিজের অস্তিত্বকে মনে হয় অবান্তর, মনে হয় এতদিন যা শিখে, জেনে, বিশ্বাস করে এসেছি এক লহমায় তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তাত্ত্বিক যৌক্তিক সত্ত্বাটাকে জলাঞ্জলি দিয়ে মনে ঢুকে আসে ভয়। ঠিক সেই সময়টাতে ভয়কে যেমন ভাবে প্রত্যক্ষ করেছি, সেরকম জীবনে এখনো অবধি আর কখনো হয়নি। ভয় এসে যেন সারা শরীরটাকে বিকল করে দিয়ে গেল। রূপকথার জাদুর ছোঁয়ায় বা মেডুসার চোখের চাহনিতে মানুষ যেমন পাথর হয়ে যায়, সেরকমই যেন পা দুটোকে কেউ ফেভিকল দিয়ে মেঝেতে এঁটে দিয়ে গেছে। সম্মোহিতের মত তাকিয়ে রইলাম ছায়া আবছায়া ঘেরা টিমটিমে আলো পড়া তালাটার দিকে, যেন সেটার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের ভাগ্য, তালা খুলে গেলে দরজার ওপারের প্রেত জগৎ গ্রাস করে নেবে আমাদের।
– হনু পালা। ওই ঘরে ভূত আছে। 
সম্বিত ফিরে এলো তথার গলায়। ও কথা শেষ করার আগেই আমি আদ্ধেক রাস্তা পেরিয়ে এসেছি। ব্যাটগুলো ছুঁড়ে ফেললাম বোর্ডের ওপর কিন্তু কড়া নিয়ম সব আলো নিভিয়ে কমন রুমের দরজা লক করে তবেই যাওয়া যাবে। কতক্ষণ লেগেছিল সেগুলো সারতে মনে নেই, খালি মনে হচ্ছিল প্রতিটা সেকেন্ড দেরী করছি তালা লাগাতে, ওপারের থেকে আমাদের দুরত্বটাও কমে আসছে বেশ খানিকটা করে। কমন রুমের বাইরে আলো একটু রয়েছে সিঁড়ির কাছে সেখানে সব ছাত্রদের সাইকেল রাখা। দৌড়তে গিয়ে দুমদাম পড়ল দু চারটে সাইকেল, তখন আমাদের দাঁড়িয়ে সেগুলো খাড়া করার সময় নেই। সিঁড়ি থেকে অন্ধকার করিডোর দিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে ঘরে ফিরে দরজাটাকে যত ভাবে সম্ভব এঁটে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু শুনতে পাওয়া যায় কিনা দেখতে। বুক তখন ধড়ফড় করছে, ওপারের জগতের থেকে কয়েক গজ দুরে ছিলাম সেটা ভেবেই হাড় হিম হয়ে রয়েছে তখন, চোখের সামনে রিপ্লে দেখতে পাচ্ছি তালাটার চলাফেরা। তবু মন জানতে চাইছে ঠিক কি ছিল দরজার পেছনে। নিউজ রুমে কি কেউ কখনো আত্মহত্যা করেছিল? নাকি এরা চা বাগান আর করলার দিকে ধানক্ষেতে গুমখুন হওয়া আত্মা, চাঁদনি রাতে চা বাগানে ভেসে বেড়ানো প্রেতকুল? রুমে ফিরে আমি আর তথা অনেক বিচার করে দেখলাম যে আমাদের বিভ্রান্তি বিন্দুমাত্রও কাটেনি বরং বেড়েছে। তবে আর একটা ব্যাপারও মনে হলো তখন। পরদিন লোকজনকে বললে যে তারা আমাদের প্রচুর খোরাক দেবে তা তখনি পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল, আমাদের রক্ত জল করা অভিজ্ঞতা যে আর কেউ বিশ্বাস করবে তা একবারের জন্যও মনে হয়নি। সে হোক বা, আমরা এটুকুই ভাবতে পারছিলাম তখন যে আমরা দুজনেই একটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি যার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমাদের নেই। কি ছিল সেটা জানতে না পারলেও এই ঘটনাটা মনের মধ্যে গেঁথে গেল চিরদিনের জন্যে। তালা ভুতের সেই ঘটনা আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর মধ্যে একটা। চোখ বুজলে এখনও দেখতে পাই সেই আবছায়া ঘেরা কমন রুম, চেয়ার থাম এসবের ছায়ায় ঘেরা নিউজ রুমের দরজা, শুনশান রাতের নিস্তব্ধতা আর এসবের মাঝে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা তালা – অধিভৌতিকের চরম অভিজ্ঞতা। মন তবু প্রশ্ন করে সেই রাত্রে ওই দরজার পেছনে কি ছিল? খেদ রয়েই গেল যে সেটা জানতে পারলাম না। যদি পারতাম তবে কি আজ আমি থাকতাম? কে জানে।
পরিশেষ: কি ছিল দরজার পেছনে সেই রহস্যের যবনিকা উঠলো পরদিন। যেমনটা আশা করেছিলাম ঠিক তাই। যতজনকে বললাম আমাদের অভিজ্ঞতার কথা সবাই অনেক ঠাট্টা করলো। এসব নাকি ছিল আমাদের কল্পনা আর গোঁড়া কুসংস্কার। দুপুরের দিকে একদল ফার্স্ট ইয়ার আমাদের টানতে টানতে নিয়ে গেল কমন রুমে। উদ্দেশ্য প্রমান করা যে আমরা ভুল দেখেছি। আমাদের যাবার কোনো প্রবৃত্তি ছিলনা তাই পেছনে দাঁড়িয়ে রইলাম, বাকিরা প্রবল উৎসাহে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জরিপ করতে লাগলো চারদিক। হঠাৎ সেই ভরদুপুরে আমাদের দু জোড়া নয় একগাদা চোখের সামনে তালা আবার ওপরের দিকে ঘোরা আরম্ভ করলো। অতিউৎসাহীর দলের সেই উচ্ছ্বাস নিমেষে মিলিয়ে গেল, সবাই যে যার মত দরজার দিকে দৌড়তে আরম্ভ করলো। দাঁড়িয়ে ছিল যতদুর মনে পড়ে বিক্রম আর ডিফেন্স। ওরা খানিক পিছু হঠে আবার গেল দরজার সামনে, আর তখনি বোঝা গেল আসল কারণ। ওরা দেখল যে নিউজ রুমের দরজাটা নড়ছে, আর যতবার দরজা পেছনের দিকে সরছে তালাটা ওপরের দিকে ওঠার চেচ্টা করছে ঠেলা মেরে। এতক্ষণে বোঝা গেল দায়ী টা কে। সেটা ছিল ডুয়ার্স থেকে ভেসে আসা বাতাস – নিউজ রুমের খড়খড়ি পেরিয়ে ওই হাওয়া ঠেলা মারছিল দরজায় আর দরজার কড়া তালাকে ঠেলছিল খাড়া হবার চেষ্টায়। রহস্য সমাধান হয়ে গেল, অতি সাহসীরা আবার ফিরে এলো, পিঠ চাপড়ানো হলো সবার, আমি আর তথা হয়ে গেলাম আবার খোরাকের টার্গেট যেহেতু আমরা দুয়ে দুয়ে চার করতে পারিনি। সত্যি আর কল্পনার জগতের তফাতটা রাতের দিকে অনেক বেশি অস্পষ্ট, দিনের বেলা যা পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়, রাতের বেলা আলো আঁধারীতে তাকেই মনে হয় ভৌতিক। মনে কিন্তু খটকাটা রয়েই গেল। সেই রাত্তিরে ওই দরজার পেছনে সত্যিই কি কেউ ছিল?  উত্তরটা মনে হয় লুকিয়ে আছে আমাদের মনের ভেতর। কেউ ছিল সে রাত্রে যদি আমরা মনে করি কেউ ছিল।  যদি মনে করি ছিলনা, তাহলে সেটা শুধু হাওয়ার খেলা।

Saturday, 7 November 2015

The curious incident of the phantom lock

It was the spring of 1997, and I was in my first year studying degree in engineering in a quaint town of Jalpaiguri in north Bengal. The campus was a nature lover's paradise — the north and west peripheries abutted the verdant Danguajhar tea garden, two silvery rivers meandering along east and west boundaries. In spring, the soft breeze blew from the north — down from the Dooars, the hinterland of the eastern Himalayas. Nothing could provide more thrilling backdrop to the spine-chilling, bloodcurdling experience that I witnessed on that spring night, which I'm going to unfurl. 

On the northern side of our first year hostel, there was a common recreation room, with a TV, a number of carom boards and the latest addition — a new table tennis board. At the far corner, a door led to a small ante room, filled with a long table and narrow benches, and large slatted windows opening up to the lush greens of the tea gardens. We used to refer it as News room, and it only opened at daytime between midday and 4 pm. At lunchtime, keen students would spend the lunch break in this room, soaking up the news around the world, to sharpen their general knowledge, whilst the other despotic ones would turn the TV on, or try a game of carom or some table tennis. 

That year, table tennis was particularly favourite as the hostel received a sports funding and the boarders saw the swank new table tennis board, and a number of thick rubber padded new bats. We shared the hostel with third year students, and there was an unwritten rule that they get to play first, unless some senior took pity on the eagerly waiting hapless fresher, looking dejected from the long wait. The first years started to flock around the tables after dinner, as the seniors began to go back to their rooms for coursework or bridge sessions. My roommate Tatha and I were very keen to find some time to hone our paddling skills, yet the wait seemed to be endless. 

Our story begins on one such weekday evening, when we had enough and decided to stay back as long as it took to play more than just one game. Our perseverance finally paid off, when around 11:30pm the crowd started to disperse. Lights over carom boards went out first, boards covered with dark blue jackets, then a while later TV was turned off as the last few of the TV addicts got up to get ready for bed. Just a few more of our classmates hovered around, and taking turns after each game, we were not too disappointed. The last two or three went to bed about half past midnight, leaving us the empty common room, a dimly lit incandescent lamp just over the table tennis board — barely struggling to illuminate past the rickety steel chairs behind us. 

Tic…toc…tic…toc…tic…toc…our ears gradually got bored to the incessant din of the ping pong ball on the bat. Arms got heavier, yet high on spirit, we carried on, mastering the spinning serves or backhand smashes, and the hands of the clock on the wall nonchalantly kept telling us the time 1:00 to 1:30 to 2:00. As I stood facing the door, tired of the ball going outside the common room, Tatha shut the door and we carried on playing with same élan. We were extremely tired, yet we continued like zombies, as if we were being controlled by some remote psychomotor commands and our only aim was to keep on playing. 

That state of active ennui broke when Tatha paused for a moment before serving and looked past me, and stood still. "What's going on? Why aren't you serving?", I asked. Tatha paused for a moment then said, "I thought I saw something flash around that door". He was pointing at the door to the news room. Then he said it must be the light catching something. We carried on playing and soon forgot about it. Another half hour passed, and we decided to call it a day after best of three sets. 

It was halfway through our game, when Tatha smashed a winner and the ball rolled on towards the back end of the room. Just as I picked the ball up and was coming back to the table, I looked at Tatha and saw his startled face, and the frowned eyes looking behind me. By nature, I can imagine things quite easily and be scared, nevertheless  usually I still can keep my logical hat on — only real things make me afraid. Looking Tatha in such a state sent a gush of adrenalin through my blood, and my body became instantly alert to witness something out of the ordinary. My heart racing, I asked Tatha again
— what's the matter with you now?
— I saw the lock move. 
— what nonsense. You must have seen the light reflecting on the lock. 
At this point, I have gained my composure back. I reasoned my thoughts, that we have been playing for a long time, with the main door to the common room shut, so no one could have come in. I looked back at the news room door and the new lock on the hasp and staple bolts. Although the dimly lit room, barely managing to illuminate the dark corners, created an eerie sight, I decided to overcome my initial fear and walked up to the door. The lock remained as it was — lifeless lump of metal, hanging from the latch as expected. Its stainless steel body throwing back some of the paltry light coming from the lamp over the table tennis board. I shouted back at Tatha "see there's nothing here, the lock did not move! Let's just have this game and get back to the room". Tatha looked reassured as well. So I started walking towards the board trying to reconvene where we left the game.

Suddenly my composure was shattered by a rather uncharacteristic raspy shout by Tatha
— HONU, I swear it just moved again! 
With a déjà vu moment, my composure disappeared again, and I started to doubt my logical self, thinking something sinister was about to happen. Goosebumps shot up all over my fatigued and sweaty body, yet I tried to run through all plausible explanations why Tatha saw the lock move. 
— what do you mean? It's not the time for a prank you know! 
— I swear it MOVED! Oh look, IT NOVED AGAIN!!! Come away Honu, something spooky behind that door it's trying to come out!
Spooky and I don't get along very well, yet out of indomitable urge to know what's going on, rather than running away, I took a few steps back towards the news room door, curiously watching the lock. Time must have stood still at that moment, as I saw the lock still lying limp on the door latch…and then it happened! I stood a metre away from the door, and right in front of my eyes, the lock started to move! Not just an odd shake, the lock started to turn upwards. The shackle of the lock still fastened through the staple part of the latch, the lock turned up — first gradually moving only millimetres, then much faster — and then it stopped with the keyhole facing me.

There are moments in my life, which I will never forget, and can reminisce any time without a chance of that memory's fading away, and that moment was the most scared I've ever felt. These are the moments, where logic bids adieu scratching its head as it had no explanation, leaving the witness in a state on utter shock and fear. Fear. That's is all I could feel engulfing me rapidly, the molten fear running through my veins, my heart trying to burst apart in anticipation of what's happening next. My limbs felt all numb, even if I knew my mind is telling me to run, my legs felt as if they were filled with lead. Transfixed at the gravity defying position of the lock, at that moment of time, it seemed that the lock is trying to send some message to the animate world from the supernatural, and it was the last bastion that's protecting the barrier that was the news room door between the dead and the undead. 

The adrenaline in my blood must have made my perceptions of time extremely prolonged, as all that feeling and moments of mesmerised gaze on the lock didn't last more than five seconds, when I got my senses back by Tatha's scream
— Honu, come away from that door! It's haunted. RUN NOW!!!
That shout broke me free of the spell that phenomenon I just witnessed cast over me. Before Tatha could finish his sentence, I was running off, throwing the table tennis bats on the board. We had to turn all the light off, despite fearing the darkness will swallow us, and had to lock the common room door — fumbling with the keys with shaking hands.  Outside, we were met with dimly lit foyer, strewn with the boarders' bicycles. We ran to our room, throwing a few cycles along the way, along the dark corridor, still fearing something through the darkness would just grab my ankles. Entering our room, we bolted the door in all possible combinations and pressed our ears against the door, if they could pick up any faint movement in the corridor. Our encounter with the other side left us completely sapped of energy, courage or reason. My heart pounding incessantly, I kept running the events that unfolded right in front of my eyes over and over, yet found no explanation to the moment of paralysing fear I just experienced. May be it was some lost soul trying to find its way back to the living world, may be there was something terrible happened in the News room ages ago? May be it was those spirits of murdered people in the tea garden or the paddy fields, who glide over the eerie tea gardens on moonlit nights. We will never know who or what it was, but that incident on that Spring night has permanently been etched in my mind, although I rather wish it never happened to me. At that very moment Tatha and I both stood dumbfounded, without any answer. All we knew is, that the next day when we tell our story, we will become a laughing stock, no one will believe the bloodcurdling experience. Yet, we will always remember those few seconds that put ur existence in question — our encounter with the other side. The incident of "phantom lock" would become one of the most memorable yet frightening moments of my life, as well as the biggest mysteries, because I will never fathom out, who or what it was that lifted the lock in the air and held it up for all the duration we were there. Reminiscing of the dimly lit common room, the tic-tocs of the table tennis, the inexplicable mosaics formed by the light and shadow from the lamp and amid that background, a moving lock — it always made me wonder, what was there behind that dark News room door that night? I wish I knew. I only wish. Or rather not…

PS: In fact it was discovered what it was the next morning. As predicted, our story was met with ridicule and disdain. At lunchtime finally a troupe of classmates went to the door, to prove that it was only a figment of our imagination and boorish superstition. And yet again, in broad daylight, the lock began to move…slowly rising up before everyone could see the keyhole right in front of their eyes. The hysteria that followed was deafening. Most of the disbeliever band was dispersed, running as fast as they can. But some brave ones stepped back and then went back to the door again. It was just then the mystery unveiled, as they noticed the door was moving. It was that Spring dooars breeze gushing inside the News room through the slatted windows and pushing the door. The hasp of the latch was moving, pressing the lock to move with it. The mystery was solved, backs patted, the salvo of derision against us was quadrupled that we didn't figure out this simple causality. Yet I will remember that night as it happened, when the lights and shadows played games with our mind, and the lack of daylight smudged the defined line between the worlds of reality and fantasy. May be there was something else behind that door that night, but we will never know. There probably was if you believe there was, or nothing if you don't believe…

PPS: On that night, after coming back in our room, we realised that we needed to go to the toilet, yet could not walk along the empty and dark corridor again to, nor open the grilled window to do it. So we used Rahul Singh's bucket we borrowed the previous day for shower. If Rahul ever reads this, this is an unreserved apology for peeing in your bucket without permission, under unavoidable circumstances.