Showing posts with label Bengali recipe. Show all posts
Showing posts with label Bengali recipe. Show all posts

Sunday, 24 January 2016

পৌষ পার্বন পুলি পিঠে আর বিশ্বায়ন

আজ মকর সংক্রান্তি। জানতাম না, মনে থাকার কথাও নয় তবু সকাল বেলা ফেসবুকে দেখি পাড়ার পুরনো বন্ধু মেরিন বেজায় চটে লিখেছে মকর কেমন দেখতে হয় জানা আছে? যুক্তিটা ফেলার নয় আর এই সোশাল আদিখ্যেতা দেখে আমারো একই রকম পিত্তি জ্বলে গেল। হয়ত আর কিছুদিন পর অমাবস্যা পূর্ণিমা অম্বুবাচী ঘেঁটুপুজো কোনো কিছুই বাকী থাকবেনা। আমাদের পূর্বজ বাম লিডাররা যেকোনো পরিবর্তনকে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র বলে চালানোর চেষ্টা করতো, তবে একটু খতিয়ে দেখলে মনে হতেই পারে যে এই সব লোকাচার কেমন ভাবে বিশ্বায়নের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। একদিকে সময় আর সামাজিক যোগাযোগের কমতিতে এসব মকর সংক্রান্তি-টান্তি শিকেয় উঠেছে, আবার সেরকমই বাজার অর্থনীতির হাত ধরে এসব হারিয়ে যাওয়া আচারবিচার থেকে মুনাফা তুলতে হাজির পুরনো আচার আচরনের ধুয়ো তোলা সংস্থারা। যেমন ঘরোয়া খাবার নিয়ে উপস্থিত ভজহরি মান্না, তেরো পার্বন, ৬ বালিগঞ্জ প্লেস। প্রথমে বিশ্বায়ন মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডালের বদলে কেএফসি ডোমিনোস ইত্যাদি খাওয়া শিখিয়ে তারপর নস্টালজিয়ার খোঁচা মেরে সেই মাছের মাথার ডাল ঘরে ২৫/- টাকার বদলে ২০০/- টাকা দিয়ে কেনাচ্ছে। সেভাবেই হয়ত অদুর ভবিষ্যতে আমরা পেয়ে যাবো পৌষ পার্বনে পুলি পিঠের হোম ডেলিভারি। তারপর মুখে গোটাকয় পিঠে ঠেসে সেলফি— ব্যাস ষোল আনা বাঙালিয়ানা ফলানো হয়ে গেল।

সব প্রজন্মই মনে হয় ভাবে যে তাদের জীবনকালটাই সবচেয়ে সেরা, নতুন পুরনো দুইয়ের নিপুন সম্মিলন। আমারো সেরকমই মনে হল আজ যে অন্তত আমাদের আশির দশকে বড় হওয়া প্রজন্ম এসব প্রচলিত প্রথাগুলোর সাথে বহুল পরিচিত ছিল। সেই ভাবনা থেকেই ইচ্ছে হল বিশ্বায়নকে তুলোধোনা বা ফেসবুকে মাকড় সংক্রান্তি জাহির না করে খানিক পৌষ পার্বনের আসল উৎকর্ষ নিয়েই খতিয়ে দেখা যাক। হ্যাঁ পিঠে পায়েস এইসব।

মকর সংক্রান্তি খালি নামেই ছিল, আমরা চিরকাল জেনে এসেছি যে এটা পৌষ পার্বন, পিঠে খাওয়ার দিন। ধর্মীয় আচার-টাচার হয়তো কিছু আছে কিন্তু সেসব নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি চোখের সামনে রসে টইটম্বুর পিঠের ছবি ভেসে ওঠায়। আর আগে খাওয়া মানে যে শুধু নিজের মাইক্রো পরিবার তা তো ছিলনা, আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশী এমনকী কিছু দুরে থাকা আত্মীয়স্বজন সবাইকেই দিয়েথুয়ে তারপর যা পড়ে থাকতো তা দিয়েই পরের তিন দিন টানা পিঠে খাওয়া চলত। বাবার অফিস, আমার স্কুল সবেতেই টিফিন পিঠে তারপর খেলতে যাবার আগে গোটাকয় আর সন্ধ্যাবেলা টিফিনে আবার সেই পিঠে। এখানে সেই পিঠেরই একটা পাঁচালি লেখার চেষ্টা করলাম। যদি কেউ আর কিছু মনে করতে পারেন লিখে পাঠালে বাধিত রইব।

পিঠের লিস্টি

১) পাটিসাপটা : পৌষ পার্বনের ন্যুনতম লেভেল। আর কিছু না হলেও খানকতক পাটিসাপটা ঠিকই হত বাড়ি বাড়ি। আর বানানোর কিছু কিছু ট্রিক মনে আছে। চালগোলা চাটুতে দিয়ে তারপর আস্ত তেজপাতা দিয়ে মিশ্রনটাকে ছড়িয়ে দিতে হত। পরে বিদেশে প্যানকেক বা ক্রেপ বানানোর পদ্ধতি দেখে সেই পাটিসাপটাই মনে পড়ে যেত। আর পুর বানানোরও বিশাল সরঞ্জাম আগের রাত থেকে নিরামিষ বঁটির মাথায় নারকেল কোরার যন্ত্র। তারপর গুড় দিয়ে কড়াইতে মেশানো। জল মরে গিয়ে গুড় আর নারকেল মিশে গেলে পুর তৈরী হয়ে গেল। কেউ কেউ গুড়ের জায়গায় চিনি দিয়েও বানাতো পুর। খোয়ার পুর এলো বেশ কিছুদিন পর।

২) মালপোয়া : ভানুর সেই মাসিমা মালপো খামুর মালপোয়া ছিল দ্বিতীয় কমন পিঠে। মালপোয়ায় পুরও লাগেনা তাই বানানো সবচেয়ে সোজা। নিতান্ত আনাড়ি রাঁধুনি যে আর কোন পিঠে পারেনা, সে অবধি মালপোয়া বানাতে পারদর্শী। পিটুলি গোলা বা ময়দার গোলা তৈরি করে গরম তেলে ভেজে তারপর চিনির শিরায় ডুবিয়ে নিলেই মালপোয়া রেডি। মালপোয়ার গোলায় খানিক মৌরি মিশিয়ে দিলে বেশ স্বাদ হয়। কতখানি পিটুলিগোলা কিভাবে কড়ায় দেয়া হল মালপোয়ার আকার আর স্বাদ তার ওপর নির্ভর করে। অল্প জায়গা জুড়ে বানালে ভেতরটা বেশ নরম থাকে। আর বেশী জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে দিলে মালপোয়া হয় বেশ মুচমুচে। বানানো এত সোজা বলে পৌষ পার্বন ছাড়াও অন্যান্য সময় পাড়ার মিষ্টির দোকানে বা লুচি কচুরির দোকানেও মালপোয়া বিক্রি শুরু হয়ে যায় দস্তুরমত।

৩) গোকুল পিঠে : গোকুল পিঠে বানানো তেমন কঠিন না হলেও খুব যে চল ছিল তেমন নয়। যতদুর মনে পড়ে, পাটিসাপটার যে পুর সেটা দিয়েই গোকুল পিঠের পুর বানানো যেত। নারকেল কোরা আর গুড়ের পুর চেপ্টে অনেকটা আলুর চপের পুরের আকারে বানিয়ে পিটুলি গোলায় ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিলে বড়া তৈরী। তারপর বড়াগুলো চিনির শিরায় ডুবিয়ে নরম হয়ে এলে গোকুল পিঠে রেডি।

৪) রস বড়া : পিঠেদের মধ্যে এটা বানানো বেশ কঠিন। বিউলির ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে ডাল মিহি করে বেটে ছোট ছোট গোল্লা বানিয়ে ডুবো তেলে প্রথমে ভাজা হতো। বড়াগুলো বেশ লালচে হয়ে এলে নামিয়ে চিনির শিরায় ডুবিয়ে রেখে দিয়ে গোল্লাগুলো নরম হয়ে গেলে রস বড়া তৈরী। তবে, কঠিন পার্টটা হলো ডালবাটা কতটা ঘন হবে সেটা। খুব ঘন হলে বড়ার ভেতরটা রান্না হবেনা, ডাল কাঁচা কাঁচা রয়ে যাবে। আর অন্যদিকে ডালবাটা বেশি পাতলা হলে তেলে ছাড়ামাত্র ডালগুলো আলাদা হয়ে যাবে। বড়া কতখানি ভাজা হবে সেটাও জরুরি। কম ভাজা হলে ডাল ভেতরে কাঁচা থেকে যাবে, যা খেতে অখাদ্য। আর ভাজা বেশি হলে বাইরেটা কড়া হয়ে যাবে, রসে ডোবালে বড়াগুলো তেমন রস শুষতে পারবেনা। প্রত্যেক বছর পৌষ পার্বনে বাবা খুব উৎসাহ নিয়ে রসবড়া বানানোর চেষ্টা করলেও কোনো না কোনো দুর্যোগে পারফেক্ট রসবড়া কখনো খাওয়া হয়নি।

৫) দুধ পুলি : দুধ পুলি ছিল পৌষ পার্বনের ম্যাগনাম ওপাস। খেতে অসাধারণ কিন্ত ঠিকঠাক বানানো প্রায় দুঃসাধ্য। পুলিগুলো বানানো হত ময়দার লেচি বেলে খোল বানিয়ে তার মধ্যে নারকোল কোরা আর গুড়ের পুর ভরে অনেকটা মাকুর আকার দিয়ে। তারপর দুধ চিনি আর এলাচ দিয়ে ফুটিয়ে তাতে পুলিগুলো দিয়ে আরো বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে দুধ বেশ খানিকটা মরে এলে দুধ পুলি তৈরী। শুনে মনে হয় এ আর এমন কী? পুলি কেমন দাঁড়াবে সেটা সবটাই নির্ভর করছে খোলের ওপর। ময়দার খোল বেশি মোটা হলে পুলিগুলো শক্ত শক্তই রয়ে যাবে, পুলি খেয়ে মনে হত যেন ময়দার তাল। আর খোল বেশি সরু হলে দুধ পুরো ঘন হবার আগেই পুলির খোল ভেঙ্গে পুরগুলো দুধে মিশে যাবে। দুধ পুলি করার অনেক চেষ্টা দেখেছি আমাদের বাড়ি বা আত্মীয়দের মধ্যে কিন্তু খুব কমই খেয়েছি যা খেয়ে মনে হয়েছে বাঃ দারুন। বেশির ভাগ সময়েই সেটা দাঁড়াত শক্ত ময়দার গোলা দাঁত ফোটানো যাচ্ছেনা অথবা চামচ ঠেকানোর আগেই পুলি ভেঙ্গে গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে — এজাতীয় বিপর্যয়ে।

৬) চুষির পায়েস :  ছোটবেলা থেকেই দেখতাম বাড়িতে চুষি বানানোর চল। আমারও সেই দেখাদেখি চুষি বানানোর বায়নাক্কা দেখে বাবা মা আমার হাতে একটা ময়দার গোলা ধরিয়ে দিত।  খুব উৎসাহ নিয়ে শুরু করলেও যখন দেখতাম বাবা মার বানানো সমান আর সরু সরু চুষির পাশে আমার এবড়োখেবড়ো মোটা মোটা চুষিগুলো, সে দৃশ্য দেখে বেশ নিরুৎসাহীই হয়ে যেতাম। পৌষ পার্বনে চুষি করার জন্যে তোড়জোড় শুরু হত অনেক আগে থেকে। ময়দার লেচি পাকিয়ে তার একটা দিক টেনে সুতোর মত লম্বা করে সেটা হাতের চেটোতে ঘষে ঘষে চুষি বানানো হত। মনে হয় অন্যান্য সময়েও অনেক জায়গায় চুষির পায়েসের চল ছিল কারণ পায়েসের গোবিন্দভোগ চালের দাম চিরকাল খুব চড়া। চুষি তাই কমদামী বিকল্প। হয়ত এখন চেষ্টা করলে বানাতে পারব চুষি, কিন্তু সেই সব সমান সাইজের আর সরু সরু চুষি অসম্ভব। তো সেই বানানো চুষি তারপর রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিলে আসল হুজ্জুতি শেষ। বাকিটা যেরকম পায়েস রান্নার পদ্ধতি তাই। ঠিক মনে পড়ছেনা শেষ কবে চুষির পায়েস খেয়েছি অন্তত পঁচিশ বছর তো হবেই, তাই ঠিক মনে পড়ছেনা চালের পায়েসের সাথে স্বাদের কি তফাত ছিল।

৭) সরা পিঠে : যতদুর মনে পড়ছে এটার চাটগাঁর নাম ছিল আস্কে পিঠে। অনেকে ভারা পিঠেও বলে। সরা পিঠে বানানোর উপকরন খুব বেশি না হলেও বানানোর ঝক্কি অনেক। তবে কারো যদি বাড়িতে ইডলি তৈরির ডিস থাকে তাহলে সরা পিঠের জন্যে সেটা যথেষ্ট। এমনকি সরা পিঠে খেতেও অনেকটা ইডলিরই মত। চাল গুঁড়ো করে তাতে নারকোল কোরা মিশিয়ে খুব সম্ভব অল্প জল দিয়ে মিশ্রণটাকে সামান্য ভেজাভেজা করা হত যাতে ঝুরঝুরে হয়ে পিঠে ভেঙ্গে না যায়। তারপর তালু ভর্তি সেই চালগুঁড়ো নিয়ে ইডলির আকারে বানিয়ে হয় ইডলি ডিসে বা হাঁড়িতে জল ফুটিয়ে তার ওপরে দিয়ে জল ফোটার বাস্প দিয়ে পিঠে তৈরী হত। তারপর সেই গরম গরম পিঠে পরিবেশন করা হত খেজুরের গুড়ের হাঁড়ির ওপরে জমে থাকা স্বচ্ছ গুড় দিয়ে, যাতে নিচের দিকের দানাদানা গুড় না থাকে। আস্কে পিঠে একবারই খেয়েছিলাম ঠাকুমা বানিয়ে খাইয়েছিল যখন প্রথম দেখা করতে যাই, নিজেদের জমির ধান আর গুড় দিয়ে তৈরী, তা ছাড়া বার কয়েক সরা পিঠে খেয়েছি কিন্তু সেগুলো লোকে এলেম কুড়োনোর জন্যে বানিয়েছিল খেতে অখাদ্য না হলেও সেরকম সুস্বাদু ছিলনা।

৮) তিল পিঠে : এটাও খুব রেয়ার বাঙালি বাড়িতে, যদিও আসামে তিল পিঠের চল প্রচুর।  আমার বার দুয়েক খাবার সৌভাগ্য হয়েছে। রেসিপি পাটিসাপটার মতই খালি পুরের জন্য নারকেল কোরা না দিয়ে সাদা কালো মেশানো তিল আর গুড় ব্যবহার করা হয়।

পিঠের পুরের জন্য যেমন লিখেছি আখের গুড় ব্যবহার করা হত সেটা সব সময় ঠিক না। খেজুরের গুড়ই প্রধানত ব্যবহার করার কথা কিন্তু অনেক সময়ই বাজারে খেজুর গুড় আসত অনেক পর, তাই সেটা না পাওয়া গেলে পাটালি না হয় আখের গুড়ই ভরসা ছিল। ইদানীং কালে খোয়া ক্ষীর দিয়ে বানানোর বেশ চল, খেতে যে খারাপ তা নয় তবে খোয়া চালু হবার মুল কারন হয়ত শর্টকাটে কাজ সারা, নারকেল কোরানো, গুড় দিয়ে জ্বাল দেয়া সেসব ঝুটঝামেলা থেকে নিস্কৃতি। আর চাল যে কি ধরনের নেয়া হত সেটা মনে আসছেনা। নবান্ন উৎসব যখন মনে হয় নতুন চাল মানে আমন ধানের চালই ব্যবহার করা হত। এখন দেখি ঢেঁকিতে গুঁড়ো করা চাল আলাদা পাওয়া যায় কিন্তু আমার মনে আছে দেখতাম পৌষ পার্বনের আগের দিন বাড়িতে চালের স্তুপ শিল নোড়া দিয়ে বাটার কাজ চলছে।

এসব বহুপ্রচলিত পিঠের বাইরেও যে কত রকমের পিঠে আছে তার ইয়ত্তা নেই। মকর সংক্রান্তি মনে হয় গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে পালন করা হয় বিভিন্ন ভাবে, কিন্তু পিঠে যতদুর জানি মূলত পূর্ব ভারতেই সীমাবদ্ধ —উড়িষ্যা, বিহার, এপার ওপার বাংলা অসম ত্রিপুরা অনেকটা জুড়েই। বিভিন্ন জেলা গ্রাম ভিত্তিতে পিঠেরও তাই প্রচুর প্রকারভেদ।

পিঠের বিষয়ে পিঠের বাইরে গিয়ে এক ঝলক দেখে নিলে উপলব্ধি করা যাবে যে আমাদের জীবন এই ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছরে কতখানি বদলেছে। গড়িয়াহাটের রাস্তার ষ্টলে বসা ঘুগনি আর আলুর দম উঠে গেছে সেই অপারেশন সানশাইন থেকে, এখনো ইচ্ছে করে খাই সেই জিবে লেগে থাকা ঘুগনি আর পোড়া পোড়া আলুর দম সাথে খানিক তেঁতুলের জল কিন্তু সানশাইনের সেই ঝকঝকে কলকাতায় তা এখন দুস্প্রাপ্য। তবে আধুনিকতা জীবনের অঙ্গ। তাকে অস্বীকার করে উত্তরের থেকে পিঠ করে যদি নস্টালজিয়ায় ভুগে অতীতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি তাহলে আমাদের ভবিষ্যত ঝরঝরে। পুরনোকে যক্ষের ধনের মত আগলে না রেখে নতুনকে জায়গা করে দেয়া আমাদের কর্তব্য, সেটা না থাকলে আমাদের অগ্রগতি বন্ধ। খাবার দাবারের চল দেখলেও সেটাই প্রকট। বাজার আমাদের শেখায় প্রতি মুহুর্তে নতুন কিছু করতে, গতানুগতিকের একঘেয়েমির থেকে বাইরে বেরোতে। আমাদের দায়িত্ব হলো নতুন পুরনো দুইকেই সমান সুযোগ দেয়া। ভাল মাল চলবে আর ওঁচা মাল লোপাট হবে, বাজার অর্থনীতির সেটাই মূল মন্ত্র। যেটা নেই সেটা হলো নিয়ন্ত্রণ, যার অভাবে যার টাকা আছে সে বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যে তার পন্যই সেরা। সেই জন্য ফান্টা টিকে গেছে গোল্ড স্পট উধাও, যদিও বিন্দুমাত্র পক্ষপাতী না হয়ে বলছি গোল্ড স্পট ফান্টার চেয়ে স্বাদে অনেক গুন ভালো ছিল। আগের সেই জোর যার মুলুক তার এখন এসে দাঁড়িয়েছে পয়সা যার মুলুক তার। আর আমরাও ছুটছি সেই পয়সার পেছনে ইঁদুর দৌড়ে, তাই আজ আমাদের জীবনেও আর অঢেল সময় নেই এসব পিঠে পুলি বানানোর বা ঘুড়ির সুতোয় মাঞ্জা দেয়ার। নতুন পুরনো, দেশী বিদেশী, স্বধর্মী বিধর্মী এসব বাছবিচার থেকে বাইরে বেরিয়ে যদি সবকিছুকে চল আর অচলের নিরিখে বিবেচনা করি তাহলে দুইয়েরই ভালোটা আমরা রাখতে পারব আর খারাপটা ছুঁড়ে ফেলতে। সম্পূর্ণ নির্মোহ পক্ষপাতমুক্ত হয়ে যদি সেটা করতে পারি তবেই নতুন পুরনো প্রকৃত মেলবন্ধন সম্ভব। সেটা যতদিন না হবে ততদিন পাড়ায় ফেরিওয়ালার থেকে টাকায় চারটে ডালপুরির জায়গায় রেস্তোরাঁয় গিয়ে ৫০/- টাকা দিয়ে দুখানা ডালপুরি খেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

শেষ করছি পিঠে নিয়ে লেখা সেই অতিপরিচিত লাইন দুটো দিয়ে:
পেটে খেলে পিঠে সয়।
পিঠে খেলে পেটে সয়না॥

পরিশেষ: নিচে গোটাকয় লিংক রইলো আরো অন্যান্য পিঠে নিয়ে জানার জন্যে -

চিংড়ি শুঁটকি গুঁড়ো দিয়ে মুসুর ডাল

আবার একটা রান্নার ব্লগ। আর আগের মত এটাও বলতে গেলে বাঙাল রান্না। রান্নার ব্লগে দেখি আসল পদ্ধতি লেখার আগে সবাই বিশাল বড় বড় গৌরচন্দ্রিকা লেখে। এই রান্নাটা এতই সরল যে খানিকটা বিস্তারে না লিখলে গোটা ব্যাপারটা চার লাইনে সারা হয়ে যাবে। । আর বিদেশে থেকে রান্নার উপকরণ যোগাড় করার অসুবিধার জন্যে খানিকটা খুলে বলতে বাধ্য হলাম।

ছোটবেলায় মা রান্না করত চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে মুসুর ডাল। মার দিকের বাড়ি খুলনায়, তাই শুঁটকি মাছের চল তেমন ছিলনা মামার বাড়িতে। রেঁধে দিলে কেউ সবাই খেতো কিন্তু বাজার থেকে শুঁটকি মাছ কিনে রান্না করার গরজ দেখাতনা। বাবার আদি বাড়ি চাটগাঁ, এর চেয়ে বড় কাঠ বাঙাল আর হয়না। সেই সুত্রে মা শুঁটকি মাছ রান্না শুরু করলো বাবার জন্যেই। কৃষ্ণনগরে থাকা কালীন হাটে বসত শুঁটকির বাজার, আর কলকাতা আসার পর কসবা বাজার। সেই রান্নায় মুসুর ডালে গোটা গোটা কুচো চিংড়ি শুঁটকি দেয়া হত। আর মনে আছে শুঁটকির জন্যে রসুন আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন। আমার তখন চিংড়িতে অ্যালার্জি তাই আমি খেতাম শুধু ডাল, তার স্বাদই মুখে লেগে থাকত চিংড়ি ছাড়াই।

ইংল্যান্ডে আসার পর এই সব উপকরণ আর তেমন সহজলভ্য রইলোনা, আর তাই আমার ফিউসন রান্না নিয়ে বেশ আগ্রহ জন্মালো। যেমন পোলিশ পিয়েরোগী খানিক সেদ্ধ করে তারপর প্যানে ভাজলে সেটা ফ্রাইড মোমোর চেয়ে খুব একটা আলাদা নয়। যা হোক, ফিউসন রান্নার আগ্রহ নিয়েই একদিন এক চিনে দোকানে পেলাম Dried Shrimp বা চিংড়ি শুঁটকি। সন্ধান এর আগেও পেয়েছি বিভিন্ন ভারতীয় Cash & Carry দোকানে শুঁটকি মাছের সম্ভারে। ভাবলাম এই চিনে শুঁটকিও একই রকম হবে। বাড়ি এনে ডিবেটা খুলতেই বদখত গন্ধে সারা রান্নাঘর ভরে গেল আর ভেতরের বস্তুটা গুঁড়ো নয় বরং কালো রঙের পেস্ট। স্বাদ ভালই কিন্তু গন্ধ এমন জোরালো যে এক চা চামচের সিকি ভাগে এক থালা ভাত সাবাড় হয়ে যায়। সেদিন রাত্রি বেলা কি ডিনার করা যায় ভেবে ঠিক করলাম শুঁটকি দিয়ে ডাল রান্নার চেষ্টা করা যাক। নিজের বড়াই না করেই বলছি খানিক নুন বেশি ছাড়া সেই রান্না ছোটবেলার খাওয়া ডালের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে রান্নার সময় গন্ধের ঠ্যালায় বউ মেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর হাল হয়েছিল।

চিনে চিংড়ি শুঁটকি পেস্ট

আগের রান্নার মতই রতি গ্রাম ছটাক ইত্যাদির বর্ণনায় গেলাম না আর আমি নিক্তিতে মেপে মেপে রান্না করিনা তেমন, খাই কেবল আমি আর দেড় বছরের মেয়ে তার তেমন বাছবিচার নেই তাই খানিক মশলা এদিক ওদিক হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়না। তবু কোনদিন তেমন বেমালুম গলতি হয়নি এখনো পর্যন্ত।

প্রণালী

এই ডালটা বেশ ঘন হওয়া দরকার চড়া স্বাদের জন্যে তাই ডাল একটু বেশিই নিতে হবে। আমি বড় কফি কাপের আধ কাপ মুসুর ডাল নিয়েছিলাম তাতে আমার মত পেটুকের দু দিন চলেছে। সসপ্যানে ধোয়া মুসুর ডাল আদ্ধেকটা কুচোনো পেঁয়াজ নুন হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। হলুদ একটু বেশি দিলে ক্ষতি নেই, রংটা গাঢ় হলেই ভাল। ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে হাতা/ঘোঁটা দিয়ে খানিকটা ঘেঁটে নিলে ডাল ছাড়াছাড়া থাকবেনা। কড়ায় সর্ষের তেল গরম করে ২-৩ কোয়া কুচোনো রসুন আর শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো অল্প ভেজে তাতে চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে দিতে হবে। যদি গুঁড়ো মাছ ব্যবহার করা হয় ভারতীয় Cash & Carry দোকানের তাহলে ২-৩ চা চামচ আর চিনে Dried Shrimp হলে ১-১.৫ চামচ পেস্ট। শুঁটকির পরিমান নিজের নিজের স্বাদমত তবে কম দিয়ে শুরু করাই শ্রেয়। তেমন শুঁটকির স্বাদ না পাওয়া গেলে আবার খানিকটা শুঁটকি ফোড়ন দিয়ে নিলেই হবে। শুঁটকি রসুন আর শুকনো লঙ্কা ভাজা হয়ে এলে সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিতে হবে কড়াইতে।  ৫ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরী শুঁটকি মাছের গুঁড়ো দিয়ে মুসুর ডাল। ডাল কতটা ঘন চাই তার ওপর নির্ভর করছে কি আঁচে কতক্ষণ ফোটাতে হবে। ব্যাস গরম ভাতে ডাল আর সাথে আলু/মাছ ভাজা পরিবেশন করুন খাবার পর থালায় মুখ দেখা যাবে!

চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে মুসুর ডাল

Friday, 18 September 2015

লইট্যা মাছের ঝাল চচ্চড়ি

যতদিন থেকে ব্লগ লেখা শুরু করেছি তাতে সাধারণত বিভিন্ন তত্ত্বের কচকচি আর গুরুগম্ভীর আঁতলামোই বেশি। আজ বরং অন্য স্বাদের কিছু লিখলাম। ২০১০ সালে যখন শেষ বারের জন্য কলকাতা গেছিলাম বাবাকে বলে রেখেছিলাম যে মাংস রোজ রোজ খাওয়াতে হবেনা, তবে মাছ যদি রোজ পাওয়া যায় তাহলে বেশ হয়।  এখানে ফেরার পর থেকে মাছ রান্না করেছি কয়েকবার তা সে Seabass কে গুরজালির মত করে রান্নাই হোক বা তেলাপিয়ার তেল ঝাল, রান্না ঠিকঠাক জমেনি আর মাছও যা পেয়েছি তা ঠিক আমাদের বাংলার মাছের মত নয়। একদিন পমফ্রেট খেয়েছিলাম বটে, আর ভারতীয় (আদতে বাংলাদেশী) রেস্তোঁরায় পাঙ্গাশ মাছ দেয় কম পয়সায় সারার জন্যে, কিন্তু সে রান্না ঠিক বাড়ির রান্নার মত নয়।  তাই মাছ না খেতে পাবার ফ্রাস্ট্রু ছিল বেশ কিছুদিন। সেদিন হঠাৎ ঠিক করলাম বাড়ির থেকে বেশ দুরে এক চিনে দোকানে যাবার। একে রবিবার, মেয়ে ঘ্যানঘ্যান করছে সারা সকাল, জেনিফার বলল চিনে দোকানে যাওয়া যাক অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম যাব যাব। গিয়ে দেখে এলাহী কান্ড, যেমন তেমন দোকান নয়, এখানে যাকে বলে superstore বাঁদিকে হোলসেলার ডানদিকে খুচরো জিনিসপত্র। চিনে খাবারের সাথে Chilli Oil আমার খুব প্রিয় সেই খুঁজতে খুঁজতে হাজির হলাম মাছের এলাকায়। একজোড়া পমফ্রেট কিনব কিনব ভাবছি, হঠাৎ দেখলাম ইংরেজিতে লেখা Loittya. ভাবলাম ব্যাপারখানা কী, এরকম নামের মিল তো পাওয়া সম্ভব নয় এ মাছ নির্ঘাত লইট্যাই হবে। ব্যাস ঠিক হয়ে গেল লইট্যা খাব, কিনে ফেললাম এক কিলোর বরফে জমানো লইট্যা। সাথে কিনলাম একগাদা মুলো আর বেগুন। বাড়ি এসে খেয়াল হলো আরে মুলো বেগুন তো লাগে লইট্যা শুঁটকিতে তাজা মাছে নয়। যাই হোক লইট্যা তো পাওয়া গেছে সেই আনন্দেই বাড়ি ফিরলাম।


আর বাকি বাঙাল বাড়ির মত আমাদের বাড়িতেও কিছু ফেলা হতনা খাবার আর লইট্যার স্বাদ তো দারুন। তেমন দেখিনি ঘটি বাড়িতে লইট্যা রান্না হতে, তবে ঘটি বাঙালের বিবাদ এখন পুরনো ব্যাপার, সেই দিকে নজর না দিলেও চলে। কিন্তু বাজারে ছোটবেলায় দেখতাম দোকানদারেরা বলত লটে মাছ যেটা শুনতে অনেকটা এপার বাংলার মত তাই মনে হয় চল যে একদম ছিলনা তা নয়। চাটগাঁর ভাষায় বলি লইট্যা বোধহয় সারা বাংলাদেশই সেই নামে জানে। এপার বাংলায় কিভাবে রান্না হয় জানা নেই তবে বাকি দু-দশটা বাঙাল বাড়ির মত আমাদের বাড়িতেও লইট্যা রান্না হত কষে ঝাল দিয়ে, সেই শুকনো শুকনো তরকারী গরম ভাত দিয়ে খাবার তুলনা হয়না। ছোটবংলায় লইট্যা পাওয়া যেত জলের দরে তেমন চাহিদা ছিলনা বলে। ওল কচু কচুর লতি এসবের মত লইট্যাও ধরা হত গরীব মানুষের খাবার নাকউঁচু লোকদের নয়। এখন দিনকাল পাল্টানোর সাথেসাথে লইট্যার জায়গা চড়া দাম হাঁকা ও ক্যালকাটা ভজহরি মান্না তেরো পার্বন ইত্যাদি ঘরোয়া বাঙালি রেঁস্তোরায় না হলেও বাজারে বাকী মাছের মত লইট্যাও আকাশছোঁয়া। লইট্যা নিয়ে একটা ছোট ঘটনা মনে পড়ল।  এ মাছের ইংরাজি নাম Bombay Duck. বহু ভাবনাচিন্তার পর আসল কারণ জানা গেল।  লইট্যার প্রথম চল ভারতের পশ্চিম দিকে। এই মাছের নাম ছড়িয়ে পরার সাথে সাথে বাংলায় ও তার চাহিদা এমন বাড়ল যে পশ্চিম থেকে লইট্যা আসত কলকাতায় বম্বে মেলে। লইট্যার চড়া গন্ধের জন্যে Bombay Mail (ডাক) এর নাম গিয়ে দাঁড়ালো চড়া গন্ধওলা যে কোনো কিছু। তাই লোকে ঠাট্টা করত যে গন্ধটা Bombay ডাকের (Mail) মত, কিন্তু সাহেবরা দুই দুই পাঁচ করে তার মানে ধরল লইট্যার নাম Bombay Duck. নামে আর কি আসে যায়, জিভে জল আসে সেটাই আসল।  কিছু কিছু রান্না আছে যা কোনো একটা এলাকার সাথে আগাপাশতলা জড়িয়ে।  লইট্যা মাছ তেমনি আমার কাছে বাঙাল পরিচয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে। বাকি  বাংলাদেশের প্রায় সব মাছই এখন কলকাতায় পাওয়া যায় তবে লইট্যা মাছ অনেকটা শুঁটকি মাছের মতই পুরোপুরি বাঙাল। চোখ বন্ধ করে বলতে পারি দুই বাংলার বাইরে লইট্যা খেতে পাওয়া প্রায় দুষ্কর যদিও পশ্চিম কূলে আর সাউথ চায়না সিতে পাওয়া যায় লইট্যা।  আর বেশি জ্ঞান না দিয়ে শেয়ার করলাম এই রান্নাটা।  আমার রেসিপিতে পরিমান সময় এসব আর ঘটা করে তেমন লিখলাম না, সেটা যে রান্না করবে তার ওপরেই ছাড় দেয়া রইল। 

লইট্যা মাছ টুকরো টুকরো করে কেটে নুন হলুদ মাখিয়ে রেখে দিতে হবে। ১ ইঞ্চি সাইজের পিস করলেই হবে।  মাথা লেজ বাদ দিয়ে রান্না করলেই ভালো, তাহলে শক্ত কাঁটা থাকবেনা। পেঁয়াজ কুচো করে কাটতে হবে।  কতখানি লাগবে সেটা কতটা কাই দরকার তার ওপর।  আমি ১ কিলো মাছে ৫০০ পেঁয়াজ দিয়েছিলাম, তবে আর একটু বেশি দিলে ভালো হত।  রসুন লাগবে অনেকটা।  আমি দেড়খানা বড় রসুন দিয়েছিলাম স্বাদ একদম ঠিকঠাক হয়েছে। বেশি দিলে হয়ত মাছের চেয়ে রসুনের গন্ধ বেশি পাওয়া যাবে। টমেটো বড় বড় পিস করে কেটে রেখে দিতে হবে। বড় কড়ায় বেশ খানিকটা সর্ষের তেল দিয়ে সেটা গরম হলে পেঁয়াজ ছেড়ে দিতে হবে।  খানিকটা ভাজা ভাজা হয়ে এলে যখন বাদামী রং ধরবে তখন রসুনবাটা আর গোটাকয় কাঁচা লঙ্কা দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ভেজে তারপর টমেটো শুকনো লঙ্কা নুন হলুদ দিকে অনেকক্ষণ কষাতে হবে। শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো বা বাটা যাই হোক না কেন অনেকটা দিতে হবে লালচে রং আর ঝালের জন্য।  কড়ায় পেঁয়াজ রসুন টমেটো সব যখন মিশে যাবে আর তেল ওপরে ভেসে উঠবে, তখন মাছগুলো কড়ায় দিয়ে দিতে হবে।  লইট্যা মাছ এমনিতে খুব নরম তাই সাবধানে মাছের টুকরোগুলোকে মসলায় মাখিয়ে করা ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। এই মাছে প্রচুর জল তাই আলাদা করে জল দেয়ার দরকার নেই মাছ থেকে বেরোনো জলেই রান্না হবে।  আঁচ একটু পর ঢিমে করে দিয়ে খানিকক্ষণ ফোটাতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকা নামিয়ে দেখে নেয়া দরকার কড়ার তলা ধরে না যায় যাতে।  এমনিতে জল যতক্ষণে মরে যাবে কড়ায় ততক্ষণে মাছ রান্না হয়ে গেছে।  অল্প কাঁচা সর্ষের তেল আর কুচোনো ধনেপাতা ওপরে ছড়িয়ে দিলেই তৈরী লইট্যা মাছের শুকনো তরকারী। এখানে বলা নিস্প্রয়োজন যে ভাত ছাড়া এ রান্না খেলে তেমন আনন্দ পাওয়া যাবেনা। গরম ভাতে শুধু শুধু তরকারী বা পাতলা মুসুর ডালের সাথেই সাধারণত লইট্যা মাছ জমে দারুন। বলে রাখা ভালো যে কখনো আগে লইট্যা খায়নি যে এতে বড় শিরদাঁড়ার কাঁটাটা খাবার সময় ছাড়িয়ে নিলে খালি সুতোর মতো কিছু কাঁটা আছে যেগুলো মুখে আটকায়না।  শিরদাঁড়া তেমন দরকার হলে গোটা মাছ হালকা সেদ্ধ করে ছাড়িয়ে নেয়া যায় তবে অত ঝক্কি করার তেমন দরকার নেই।  


পরের বার ইচ্ছে আছে মাছের বড়া বানানোর, তবে তার রেসিপি লেখার মত কিছু নয়। যদি শুঁটকি মাছ রান্না করি তখন আবার লিখবখন।