আবার একটা রান্নার ব্লগ। আর আগের মত এটাও বলতে গেলে বাঙাল রান্না। রান্নার ব্লগে দেখি আসল পদ্ধতি লেখার আগে সবাই বিশাল বড় বড় গৌরচন্দ্রিকা লেখে। এই রান্নাটা এতই সরল যে খানিকটা বিস্তারে না লিখলে গোটা ব্যাপারটা চার লাইনে সারা হয়ে যাবে। । আর বিদেশে থেকে রান্নার উপকরণ যোগাড় করার অসুবিধার জন্যে খানিকটা খুলে বলতে বাধ্য হলাম।
ছোটবেলায় মা রান্না করত চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে মুসুর ডাল। মার দিকের বাড়ি খুলনায়, তাই শুঁটকি মাছের চল তেমন ছিলনা মামার বাড়িতে। রেঁধে দিলে কেউ সবাই খেতো কিন্তু বাজার থেকে শুঁটকি মাছ কিনে রান্না করার গরজ দেখাতনা। বাবার আদি বাড়ি চাটগাঁ, এর চেয়ে বড় কাঠ বাঙাল আর হয়না। সেই সুত্রে মা শুঁটকি মাছ রান্না শুরু করলো বাবার জন্যেই। কৃষ্ণনগরে থাকা কালীন হাটে বসত শুঁটকির বাজার, আর কলকাতা আসার পর কসবা বাজার। সেই রান্নায় মুসুর ডালে গোটা গোটা কুচো চিংড়ি শুঁটকি দেয়া হত। আর মনে আছে শুঁটকির জন্যে রসুন আর শুকনো লঙ্কা ফোড়ন। আমার তখন চিংড়িতে অ্যালার্জি তাই আমি খেতাম শুধু ডাল, তার স্বাদই মুখে লেগে থাকত চিংড়ি ছাড়াই।
ইংল্যান্ডে আসার পর এই সব উপকরণ আর তেমন সহজলভ্য রইলোনা, আর তাই আমার ফিউসন রান্না নিয়ে বেশ আগ্রহ জন্মালো। যেমন পোলিশ পিয়েরোগী খানিক সেদ্ধ করে তারপর প্যানে ভাজলে সেটা ফ্রাইড মোমোর চেয়ে খুব একটা আলাদা নয়। যা হোক, ফিউসন রান্নার আগ্রহ নিয়েই একদিন এক চিনে দোকানে পেলাম Dried Shrimp বা চিংড়ি শুঁটকি। সন্ধান এর আগেও পেয়েছি বিভিন্ন ভারতীয় Cash & Carry দোকানে শুঁটকি মাছের সম্ভারে। ভাবলাম এই চিনে শুঁটকিও একই রকম হবে। বাড়ি এনে ডিবেটা খুলতেই বদখত গন্ধে সারা রান্নাঘর ভরে গেল আর ভেতরের বস্তুটা গুঁড়ো নয় বরং কালো রঙের পেস্ট। স্বাদ ভালই কিন্তু গন্ধ এমন জোরালো যে এক চা চামচের সিকি ভাগে এক থালা ভাত সাবাড় হয়ে যায়। সেদিন রাত্রি বেলা কি ডিনার করা যায় ভেবে ঠিক করলাম শুঁটকি দিয়ে ডাল রান্নার চেষ্টা করা যাক। নিজের বড়াই না করেই বলছি খানিক নুন বেশি ছাড়া সেই রান্না ছোটবেলার খাওয়া ডালের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তবে রান্নার সময় গন্ধের ঠ্যালায় বউ মেয়ে বাড়ি থেকে পালানোর হাল হয়েছিল।
চিনে চিংড়ি শুঁটকি পেস্ট |
আগের রান্নার মতই রতি গ্রাম ছটাক ইত্যাদির বর্ণনায় গেলাম না আর আমি নিক্তিতে মেপে মেপে রান্না করিনা তেমন, খাই কেবল আমি আর দেড় বছরের মেয়ে তার তেমন বাছবিচার নেই তাই খানিক মশলা এদিক ওদিক হলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়না। তবু কোনদিন তেমন বেমালুম গলতি হয়নি এখনো পর্যন্ত।
প্রণালী
এই ডালটা বেশ ঘন হওয়া দরকার চড়া স্বাদের জন্যে তাই ডাল একটু বেশিই নিতে হবে। আমি বড় কফি কাপের আধ কাপ মুসুর ডাল নিয়েছিলাম তাতে আমার মত পেটুকের দু দিন চলেছে। সসপ্যানে ধোয়া মুসুর ডাল আদ্ধেকটা কুচোনো পেঁয়াজ নুন হলুদ দিয়ে সেদ্ধ করতে হবে। হলুদ একটু বেশি দিলে ক্ষতি নেই, রংটা গাঢ় হলেই ভাল। ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে হাতা/ঘোঁটা দিয়ে খানিকটা ঘেঁটে নিলে ডাল ছাড়াছাড়া থাকবেনা। কড়ায় সর্ষের তেল গরম করে ২-৩ কোয়া কুচোনো রসুন আর শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো অল্প ভেজে তাতে চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে দিতে হবে। যদি গুঁড়ো মাছ ব্যবহার করা হয় ভারতীয় Cash & Carry দোকানের তাহলে ২-৩ চা চামচ আর চিনে Dried Shrimp হলে ১-১.৫ চামচ পেস্ট। শুঁটকির পরিমান নিজের নিজের স্বাদমত তবে কম দিয়ে শুরু করাই শ্রেয়। তেমন শুঁটকির স্বাদ না পাওয়া গেলে আবার খানিকটা শুঁটকি ফোড়ন দিয়ে নিলেই হবে। শুঁটকি রসুন আর শুকনো লঙ্কা ভাজা হয়ে এলে সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিতে হবে কড়াইতে। ৫ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরী শুঁটকি মাছের গুঁড়ো দিয়ে মুসুর ডাল। ডাল কতটা ঘন চাই তার ওপর নির্ভর করছে কি আঁচে কতক্ষণ ফোটাতে হবে। ব্যাস গরম ভাতে ডাল আর সাথে আলু/মাছ ভাজা পরিবেশন করুন খাবার পর থালায় মুখ দেখা যাবে!চিংড়ি শুঁটকি দিয়ে মুসুর ডাল |
No comments:
Post a Comment