Showing posts with label Bengali society. Show all posts
Showing posts with label Bengali society. Show all posts

Wednesday 20 May 2015

কলকাতা একাল সেকাল — প্রথম পর্ব ১৬৯০-১৭৯৯

স্কুলে পড়ার সময় ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে আমাদের পিটি টিচার মেহেবুব আলি স্যার কোন একটা ক্লাস নেবার সময় বলেছিলেন —


"উড়ে মেড়ো আর শালপাতা
এই তিন নিয়ে কলকাতা"

সে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা, তখন লোকজন অত ঠুনকো সেন্টু নিয়ে ঘুরতনা, আজকের দিনে হলে হয়ত আলি স্যারের এতদিনে শোকজ, ফেসবুকে ছবি শেয়ার, ঘেরাও, হ্যাশট্যাগে আলি নিপাত যাও — আরো কত কিছু ঘটে যেত। সেই সময় এসব কিছুই হয়নি বরং ক্লাসের উড়ে মেড়ো বন্ধুরাও হোহো করে হেসেছিল। পরে যখন নিজেকে সিউডো-আঁতেল মনে করতে শুরু করেছি, তখন কথাগুলো একটু স্থুলরুচির লেগেছিল বটে কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তার চেয়ে বেশি সরলভাবে কলকাতাতেই বর্ণনা করা যাবেনা। ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে তিরিশ বছর সময় নিতান্তই খাটো কিন্তু এই তিরিশ বছরে সময় বদলেছে অনেকটাই, বিশেষ করে শহরটা। বদলে গেছে চেনা জানা শব্দ, দৃশ্য, বর্ণ, গন্ধগুলো। এখন সেই শহরের থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে বৃষ্টির ছাঁট যখন গা-মাথার সাথে মনটাকেও ভিজিয়ে দিয়ে যায়, তখন মনে পড়ে সেই প্রিয় শহরের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিগুলো। তবে যে কলকাতার কথা মনে পড়ে তার সাথে এখনকার কলকাতার কতটা মিল তা বলা কঠিন। কলকাতার একাল আর সেকাল পেরনোর যাত্রায় ঝাঁক মারার ইচ্ছা থেকেই শুরু করলাম এই লেখা। ঐতিহাসিক বা উইকিহাসিক অনুসন্ধান আমার কর্ম নয় বরং চেনা জানা তথ্য আর স্মৃতি মিশিয়ে তৈরী করা বেনিআসহকলা কলকাতার ছবিটাই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

কলকাতা জানতাম এতদিন জোব চার্নক সাহেবের সৃষ্টি, ২৪শে আগস্ট ১৬৯০ সালে এর ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে যে ১৬৯০ সালে চার্নক সাহেব কলকাতাকে হাওয়া থেকে আমদানি করেননি, কলকাতা ছিল কলকাতাতেই তার বহু আগে থেকে। মুর্শিদাবাদের নবাবদের থেকে চার্নক খালি খাজনা আদায়ের চুক্তি পায়। তাই কলকাতার জন্মদিন নিয়ে বহু বাগবিতন্ডা ঘটেছে ইদানীং কালে, সাবর্ণ চৌধুরীদের পরিবারবর্গ আর বিশিষ্ট কিছু ঐতিহাসিকদের তত্ত্বাবধানে। তাঁরা এখন প্রতিবাদ করে ২৩শে আগস্টকে কলকাতার জন্মদিন হিসাবে পালন করার প্রস্তাব রেখেছেন। কাজেই দেখা যাচ্ছে জন্মলগ্ন থেকেই কলকাতা মানে ক্যাচাল। সেই একই ক্যাচাল নামের মাহাত্ম্য নিয়েও। কলকাতা কি কলির কাতা থেকে এসেছে না কাল কাটা? কালীক্ষেত্রও পিছিয়ে নেই সেই লিস্টে। কালো কুত্তা থেকে কলকাতার রূপান্তর নিয়ে কেউ কিছু ভেবেছে কিনা জানা নেই। তবে হ্যাঁ, সুতানুটি গোবিন্দপুর আর কলকাতার মধ্যে সাহেবদের কাছে কলকাতাটাই সুবিধের ঠেকেছিল ভাগ্যিস। শেক্ষপীর মশাই লিখে গেছিলেন বটে নামে কী আসে যায় — তা অনেকটাই আসে যায় বইকি। গোবিন্দপুর নাম হলে সেটাকে সাহেবরা কী বলত ভেবেই বেশ আমোদ লাগছে গবিন্ড্যাপোর বা সিউটানিউটে জাতীয় নামগুলো ভেবে। তার ওপর তখন আর কেউ বলতনা ধ্যাদ্ধেড়ে গোবিন্দপুর, হয়তো ধ্যাদ্ধেড়ে কলকাতা বলত।

Courtesy: WB government tourism
তবে যতদিন আগে থেকেই থাকুক না কেন, কলকাতার স্থাপন আর বাড়বাড়ন্তের পিছনে যে ব্রিটিশদের অবদান প্রায় একশো ভাগ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই শহর ছিল আগাগোড়া ব্রিটিশদের বানিজ্য থেকে সাম্রাজ্য চালানোর ঘাঁটি, আর এখনকার সাবেকী বনেদি জমিদার পরিবার বা তখনকার বাঙালী নব্য চিন্তাধারার ধারক আর বাহকরা যে ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের ফসল। তাই যে কলকাতা ছিল সাহেবদের চোখের মনি, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জোয়ারে তারা যখন পাততাড়ি গুটিয়ে দিল্লিতে নিয়ে গেল রাজধানি, কলকাতার পতন সেই তখন থেকেই শুরু। ভেবে দেখলে অনেকটা ইন্টারনেট আসার আগে আর পরের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মত। তবু যে কলকাতা টিঁকে রয়েছে আর বেড়েও চলেছে, বাকী মহানগরীগুলোর সাথে পাল্লা না দিতে পারলেও কলকাতা যে থেমে যায়নি বরং বদলানো সময়ের এক উজ্জ্বল সাক্ষ্য বয়ে চলেছে গত তিনশ বছর ধরে, সেসব ভাবলে কলকাতাকে ধুস কোনো ফিউচার নেইদের দলে ফেলে দিতে এখনও খানিকটা দ্বিধা হয়। কখনো কখনো পুরনো কলকাতার ছবিগুলো দেখলে মনে প্রশ্ন জাগে সেই সময়কার জীবন ঠিক কেমন ছিল, কলকাতার হরাইজন কেমন দেখতে ছিল। আবার সেই গোড়ার সময়ে ফিরে গেলে সুতানুটি ছিল জাল বোনার জায়গা আর কলকাতা না গোবিন্দপুর গঙ্গার ধারে জেলেদের গ্রাম। নবাবদের পেয়াদা আসত কর নিতে সেখানেই কলকাতার উল্লেখ। জোব চার্নক কলকাতার ইজারা নেবার পর ধরে নেয়া যেতেই পারে যে এই তিন গ্রামের সুযোগসন্ধানি মানুষজন বাড়তি কিছু আয়ের আশায় সাহেবদের দপ্তরে হাজির হয়ে গিয়েছিল, আর চার্নকেরও দরকার ছিল লোকজনের তাই সেখান থেকেই যাত্রা শুরু শহর কলকাতার। ইংরেজরা যত গেঁড়ে বসতে শুরু করল, কলকাতার গুরুত্বও তত বাড়তে লাগল তাদের কাছে, ফলে ব্রিটিশ ধাঁচের ঘরবাড়ি অফিসকাছারি সবই তৈরী হতে লাগল তবে যতদুর জানা আছে সেসব পুরোদমে শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধে নবাবদের তথা মুর্শিদাবাদের পতনের সাথে সাথে। ফোর্ট উইলিয়াম যা ইংরেজদের সামরিক শক্তির ঘাঁটি ছিল, তাকে ঘিরেই বেড়ে উঠতে লাগল কলকাতা। কলকাতার অবস্থানগত গুরুত্ব তখন অশেষ একদিকে মুর্শিদাবাদের নবাবতন্ত্র লুপ্ত হওয়ায় ব্রিটিশদের একচেটিয়া রাজত্ব, তার ওপর উত্তরে ফরাসীদের গঙ্গায় নদীপথে যাতায়াতেও লাগাম দেয়া যাবে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে।

পলাশীর যুদ্ধ, যাকে আমরা স্কুলে পড়তাম বণিকের মানদন্ড পরিনত হল শাসকের রাজদন্ডে, সেখান থেকেই কলকাতার পরিবর্তনের শুরু। ইংরেজরা যখন অপ্রতিদ্বন্ধী হয়ে ব্যবসা তথা সাম্রাজ্য বাড়ানোর পথে অগ্রসর হচ্ছে, একদিকে যেমন তখন দরকার পড়ল স্থানীয় লোকবল সেই ব্যবসা চালানোর জন্য, তেমন শয়ে শয়ে ব্রিটিশ মানুষ ভাগ্যের খোঁজে এসে জুটল কলকাতায়, কিছু যোগ দিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে ব্যবসা করতে বাকিরা যোগ দিল সৈন্যদলে। তাদের রুটি রুজির সাথে সাথে মাথার ওপর একটা ছাদেরও দরকার ছিল, তাই সেখান থেকে শুরু হল বিপুল পরিমান বাড়িঘর তৈরি, সেই সাথে অফিস গুদাম কাছারি থানা পুলিশ যানবাহন আমোদপ্রমোদ লেখাপড়া পরিবার—সবকিছু মিলে এক বিশাল কর্মকান্ড।

ভারতে ব্যবসা করতে আসার শুরু থেকে বিলিতি সাহেবদের তাঁবেদারের অভাব ছিলনা, সবাই নিজের আখের গোছানোর চক্করে ইংরেজদের বানিজ্য বিস্তারে প্রচুর সাহায্য করেছিল। সেযুগের অবস্থাপন্ন কুলীন বাঙালি লোকজন ছিল সেই লিস্টের একদম প্রথমে। এঁদের সমাজে হয়ত নাম ছিল কিন্তু মান তেমন ছিলনা যার আশায় এঁরা ব্রিটিশদের দপ্তরে হাজিরা দিতেন। এদের মধ্যে শিক্ষিত মানুষ কিছু থাকলেও বেশীরভাগই অজ্ঞ আর দাম্ভিক, হেমন্ত মুখার্জির স্ত্রী ছবির "খিড়কী থেকে সিংহদুয়ার এই তোমাদের পৃথিবী" গানটা এদের জীবনযাত্রার নিখুঁত বিবরণ। সুযোগসন্ধানি জাত ব্যবসায়ী ইংরেজরা এদের ক্ষমতালোলুপ স্বভাব থেকে ফায়দা তোলার জন্য এঁদেরকে বিভিন্ন খেতাবে ভুষিত করতে লাগল রাজা, রায়বাহাদুর, লাট, রায়চৌধুরী ইত্যাদি। বলাই বাহুল্য যে এগুলো ছিল ফাঁপা উপাধিমাত্র, এদের ক্ষমতা ছিল বাড়ির মানুষজন আর চাকরবাকর অবধি। খুবই কার্যকর কনসেপ্ট, অনেকটা অ্যামওয়ে ডায়োটেকের মত ডাইরেক্ট মার্কেটিং, লোকে ভাবল আহা আমি এখন অমুক সার্কেল তমুক সার্কেলের সদস্য, মাথার ওপর যে পঞ্চাশটা ওরকম সার্কেল রয়েছে সেটা মাথায় থাকেনা। এই পাইয়ে দেয়ার আর স্বজনপোষনের যে রীতি চালু হল আঠের শতকে, তার ফলস্বরূপ বাঙালি পেল বাবু সংস্কৃতি যা এখনও আমাদের পিছু ছাড়েনি, বাকী ভারতে আমরা এখনও বাঙ্গালিবাবু বা বাবুমোশায় কেমোন আছে আমি রসোগোল্লা খাবে জাতীয় ব্যঙ্গের খোরাক।

ইংরেজরা ভারতে শাসন করে কী পরিমান অর্থ উপার্জন করেছিল তার উদাহরন ইংল্যান্ডে বিভিন্ন প্রাসাদ কেল্লাগুলোয় জমিয়ে রাখা বিত্ত আর সেইসব আঞ্চলিক আর্ল ডিউকদের জীবনযাপন দেখে। অন্যদিক থেকে দেখলে হয়তো আর এক উদাহরন পাওয়া যাবে এই বাবুদের জীবনযাপন দেখে। ব্রিটিশরা বাংলা থেকে যা উপার্জন করত, এই তাঁবেদার বাবুরা তার ছিঁটেফোঁটাও পেতনা তবু যা পেত তা থেকেই এই বাবুদের যেরকম দৃষ্টিকটু বৈভবের পরিচয় পাওয়া যায় — তা সে দুর্গাপুজার ধুম হোক বা পায়রা পোষা, বেড়ালের বিয়ে দেয়া, ব্রুহাম/ফিটন গাড়ি চড়া যাই হোক না কেন — তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকেনা ইংরেজরা কি পরিমান সম্পদ আত্মসাৎ করেছিল যাতে তার বিন্দুমাত্র দিয়েও কলকাতার বাবু সম্প্রদায় ঐজাতীয় বিলাসিত করতে পারে। এই বাবুদের প্রাসাদসম বাড়িঘর তৈরীর জন্য কলকাতার সীমানা বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ল যাতে বিভিন্ন বাবুদের এলাকা আলাদা থাকে। এই সময়ই কলকাতা দুই ভাগ হয়ে গেল, দক্ষিণে খিদিরপুর ফোর্ট উইলিয়াম আর কলকাতা বন্দর অবধি ব্রিটিশদের এলাকা অফিস বাড়িঘর গীর্জা কবরস্থান ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্য সব এই এলাকায় যোগ হতে লাগল, আর উত্তরে কলকাতা বাড়তে লাগল বনেদি বাঙালি বাবুদের পয়সা ছড়ানোর জায়গা হিসেবে। এভাবেই কলকাতার মানচিত্রে জায়গা করে নিতে লাগল বৌবাজার শোভাবাজার শ্যামবাজার বড়বাজার জোড়াসাঁকো কাশীপুর। তবু সাহেবরা খুব সুক্ষ্ণভাবে বাঙালী আর ইউরোপীয় সমাজকে আলাদাই রেখেছিল, দহরম মহরম থাকলেও এই বাবুদের সাথে সাহেবদের সম্পর্ক প্রভুভৃত্যের চেয়ে বেশী কিছু ছিলনা, শুধু ঠুলি পরা বাবুরা ভাবত তারা সাহেবদের কাছের লোক।

আঠের শতকে কলকাতার এই বিপুল সম্প্রসারণ ছাড়া আরো দুটো ব্যাপার ঘটছিল এই সময়ে। এই সময়ে ইংরেজরা তাদের সাম্রাজ্য বাড়াচ্ছিল বটে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তখনো সোচ্চার হয়নি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসকরা যতই অন্যভাবে মানুকনা কেন, নবাগত কাজের সন্ধানে আসা সাধারন ইংরেজদের কোম্পানি তখন স্থানীয় মানুষদের সাথে মেলামেশা, হিন্দু ও মুসলিম মহিলাদের বিয়ে করে কলকাতায় পরিবার স্থাপন করা এসবে উৎসাহিত করত। ফলস্বরূপ কলকাতা পেয়েছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজ যা এখনো কলকাতার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তৈরী হল মধ্য কলকাতা যা আসলে কলকাতার পূর্বদিকে বৃদ্ধি, পশ্চিমে এসপ্ল্যানেড থেকে পূর্বে যার বিস্তার ছড়িয়ে গেল এন্টালি মৌলালী অবধি। দ্বিতীয় ঘটনাটা অবশ্যই আরো গুরুত্বপূর্ণ কলকাতার ভবিষ্যতের জন্য। পলাশীর যুদ্ধজয়ের পর থেকে ব্রিটিশরা কলকাতাকে তাদের সাম্রাজ্যের রাজধানী বানানোর জন্য প্রস্তুত করতে লাগল, ফলে শিল্প বানিজ্য স্থাপত্য এসবের সাথে দরকার হয়ে পড়ল সমাজব্যবস্থার উন্নয়ন শিক্ষা স্বাস্থ্য আইন সব দিকেই। প্রশাসনিক কাজকর্মের জন্য দরকার হয়ে পড়ল ইংরেজী শিক্ষিত কেরাণীদের কিন্তু নতুন বৃটিশ মানুষেরা ছিল স্বল্পশিক্ষিত খেটে খাওয়া মজুর তাই সেই দায় বর্তাল কলকাতাবাসী বাঙালি জনগনের ওপর, যেখান থেকে কলকাতার ইংরেজী শিক্ষাব্যবস্থা সুত্রপাত। কলকাতার সাংস্কৃতিক বিকাশের সেটাই প্রথম পদক্ষেপ যা এতদিন সামাজিক বৈষম্যের জালে জড়িয়ে থাকা বাঙালী মানুষদের চিন্তাধারার বিকাশ আর সেই সুত্রে শুধু শিক্ষা নয়, চরিত্র নির্মানেও উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেবে পরবর্তী দুই শতাব্দী জুড়ে।  

Courtesy: A. European Buildings at Calcutta. Solvyns, Les Hindous 
কলকাতার এই প্রথম শতকে তৎকালীন ইংরেজ শাসিত ভারতের রাজধানি হিসেবে কলকাতার বিত্তবৈভব একমাত্র এক শহরের সাথেই তুল্য ছিল, তা হল ব্রিটিশদের মুল রাজধানী লন্ডন যার সাথে জুড়ে আছে হাজার বছরের ইতিহাস, কলকাতা যার কাছে অভিজ্ঞতায় নিতান্তই এঁড়েগরু। সেই সুনামের জেরেই আঠার শতকের শেষের দিকে কলকাতায় পা রাখল চিনে, আর্মেনিয়, ইহুদী সম্প্রদায়ের মানুষরা। আজকের যুগে আমরা যাকে বলি মাল্টিকালচারাল কসমোপলিটান দুশ বছর আগে কলকাতায় সেই যুগান্তরটাই ঘটছিল, যা আজকের কলকাতার জাতিগত ভাষাগত ধার্মিক বৈচিত্রপূর্ণতার পথে প্রথম পদক্ষেপ। পরবর্তী দুই শতকে কলকাতার ও সেই সাথে নাগরিকদের বিবর্তন বিবেচনা করলে শুরুর সেই একশ বছর যা ঘটনাবহুল ছিল সেই তুলনায় আজকের পরিবর্তনগুলো নিতান্তই মামুলি। জন্মলগ্ন আর শৈশব থেকে তারপর চোখ রাখা যেতে পারে উনিশ শতকে যা বাংলার রেনেসাঁস যুগ হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তবে সেটা পরবর্তী কিস্তিতে।

(চলবে)