Showing posts with label কলকাতা. Show all posts
Showing posts with label কলকাতা. Show all posts

Monday, 12 October 2015

ক্রস কানেকশান: একটি রহস্য নাটিকা

সে একটা নাটক শুনেছিলাম বটে একদিন। তখন বাড়িতে টিভি আসেনি আর তেমন বড় হইনি যখন বন্ধুদের সাথে ছুটির দিন পাড়ায় টো টো করে ঘুরবো। রবিবারগুলো কাটত হয় যোধপুর পার্কে মামার বাড়ি জেঠুর বাড়িতে নাহয় সকালে পাড়ায় পাশের বাড়ি মহাভারত দেখে ১১টা থেকে খানিক আড্ডা মেরে বা ক্রিকেট খেলে ১টায় বাড়ি তারপর চান খাওয়া সেরে রেডিও খোলা। কোন কোন রোববার সারা সকালটাই রেডিও শুনে কাটত। শুধু কানে শুনে সব ব্যাপারগুলো বোঝার চেষ্টা করার জন্য কল্পনাশক্তি অনেক জোরালো ছিল — পুরো ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটতে দেখতে পেতাম। এরকম এক রবিবার দুপুরে খুব সম্ভব ২টো ৪৫য়ে কলকাতা ক'য়ে একখানা নাটক শুরু হল। পঁচিশ বছরেরও আগে শোনা সেই নাটকের কথা ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। কার লেখা কে মুল চরিত্রায়ন করেছিল সেসব একদম মনে নেই তবে সেই নাটকের ছায়া অনুসরন করে এই নাটিকা লেখার প্রচেষ্টা। একটাই অঙ্ক দৃশ্যও ধরতে গেলে একটাই। 

স্থান: লেকের উল্টোদিকে এক ফ্ল্যাটবাড়ি।  
সময়: আশির দশকের শেষের দিকে জানুয়ারি মাস রবিবার দুপুর দুটো 

শ্রীমতি সরকার খবরের কাগজ পড়ছেন বারান্দায় বসে, বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই। বিধবা, একাই থাকেন এই বহুতল ফ্ল্যাটে। ছেলে সংসার নিয়ে বিদেশে। এক কাজের লোক আসে লক্ষ্মীকান্তপুরের দিক থেকে সে এখন দু সপ্তার ছুটি নিয়ে দেশে। এই কদিন তাই রান্নাটা নিজেকেই করতে হচ্ছে শ্রীমতি সরকারকে। সকাল থেকে ঝাড়পোঁছ শেষ করে দুপুরের খাওয়াটা সেরে সবে বসেছেন আনন্দবাজারটা নিয়ে। ছেলের ফোন করার কথা কিন্তু কদিন থেকে ফোনটা যা ঝামেলা করছে এক্সচেঞ্জ একদিন ঠিক থাকে তো দুদিন ডাউন। কাগজের ভেতরের পাতায় এক বাড়িওয়ালার খুনের খবর বেরিয়েছে। 

শ্রীমতি সরকার (স্বগতঃ) : আবার একটা খুন! কি দিনকাল পড়েছে কাউকে বিশ্বাস করা যায়না। শেষে বিশ বছরের পুরনো কাজের লোক এভাবে ধোঁকা দিল? নাঃ পাহারাদার রাখার প্রস্তাবটা ভেবে দেখতে হচ্ছে ফ্ল্যাটের সবাই টাকা দিলে কত আর লাগবে? স্বস্তিতে থাকা যাবে অন্তত। দেখি ডায়াল টোনটা এলো কিনা যা ভোগাচ্ছে এ কদিন। 

(শ্রীমতি সরকার বসার ঘরে গিয়ে কাঠের দেয়াল ইউনিটে ঢাউস রঙিন টিভির পাশে রাখা ফোনের রিসিভারটা তুললেন। ডায়ালটোন পাওয়া গেছে)

শ্রীমতি সরকার (স্বঃ) : এই তো কাজ করছে! ছেলেটা ফোন করলে হয় আবার বিগড়ে যাবার আগে। দেখি মৌসুমীকে ফোন করি অনেকদিন আসেনি এদিকে। 

মৌসুমী শ্রীমতি সরকারের ভাইঝি। ঢাকুরিয়ায় বাড়ি মাঝে মধ্যেই এসে দেখা করে যায় পিসির সাথে। 

(ফোনে হঠাৎ এক পুরুষকন্ঠের স্বর ভেসে এলো।  রুক্ষ কর্কশ গলা। বেশ শাসানোর স্বরে আর কাউকে কিছু বলছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা কি কথা হচ্ছে। আবার শোনা গেল দ্বিতীয় এক কন্ঠ।)

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) উফ আর পারা গেলনা। ভাবলাম ফোন টা ঠিক হয়েছে তা না আবার ক্রস কানেকশন। 
শ্রীমতি সরকার : এই যে ভাই এটা ক্রস কানেকশন হয়েছে আপনাদের আবার ফোন করতে হবে।  

প্রথম কন্ঠ : এই দাঁড়া তো! শুনতে পেলি কারো গলা?
দ্বিতীয় কন্ঠ : না বস লাইনটা গড়বড় করছে বহুত। তুমি বলো। 

(এবার গলা দুটো অনেক স্পষ্ট। শ্রীমতি সরকার দুটো কথাই শুনতে পেলেন।)

শ্রীমতি সরকার : (একটু জোরেই) ক্রস কানেকশন ভাই, শুনতে পাচ্ছেন? 

শ্রীমতি সরকারের কথার মাঝেই প্রথম কন্ঠ আবার কথা শুরু করে দিল।  বেশ জোরালো গলা, শুনে মনে হয় লোকজনকে হুকুম করে করে অভ্যস্ত। 

প্রথম কন্ঠ : তুই সাবধানে কাজ শেষ করবি লোকজন যেন টের না পায়।  কাজ হাসিল করে কদিন গায়েব হয়ে যেতে হবে তোকে। টাকার চিন্তা করিসনা আমি রেখে আসব গনেশের কাছে। পুলিশ যেন একদম সন্দেহ না করে।  

পুলিশের কথায় মিসেস সরকারের একটু আগ্রহ জাগলো। চুপ করে শুনতে লাগলেন কি বলছে লোকদুটো।  কথাবার্তার ভাবগতিক মোটেও ভালো ঠেকলনা শ্রীমতি সরকারের। 

প্রথম কন্ঠ: আমি কভার করব তোকে ভয় নেই।  আমি রাস্তায় দাঁড়াবো কান খাড়া রাখিস বেগতিক দেখলেই সিটি মারব সাথেসাথে বেরিয়ে আসবি কিন্তু দৌড়োবিনা।  এমনিতে এই সময় সাদার্ন অ্যাভিনিউ ফাঁকাই থাকে চুপচাপ কাজ গুটিয়ে বিকেল গড়ানোর আগেই কেটে পড়তে হবে।  
দ্বিতীয় কন্ঠ: গুরু খবর পাকা তো শুধুমুধু হানা মেরে খালি হাতে ফিরতে হবেনা তো?
প্রথম কন্ঠ: সেসব নিয়ে চিন্তা করিসনা খবর একদম পাকা। তুই শুধু যা করতে বলেছি ঠান্ডা মাথায় সেরে ফেলবি, কথার নড়চড় হবেনা আমার ষাট তোর চল্লিশ। 

শ্রীমতি সরকারের উৎকন্ঠা বেড়ে গেল।  লোকগুলো তো অবশ্যই কোনো বদ মতলব আঁটছে। ঠিক করলেন খানিকক্ষণ শুনবেন কি বৃত্তান্ত তারপর পুলিশকে ফোন করা যাবেখন। চুপ করে শুনতে লাগলেন। 

দ্বিতীয় কন্ঠ: বস সাবাড় করতেই হবে না মুখ চোখ বেঁধে ফেলে আসবো?
প্রথম কন্ঠ: এই হারামি এতবার করে বললাম শেষে তুই এই বুঝলি? সালা জানে না মারলে পুলিশ তো আসবে, তোকে কিরম দেখতে তার ছবিও একটা বানাবে, তারপর তোর্ ধরা পড়তে আর কতদিন? ছেনালীপনা বন্ধ কর, ফ্ল্যাটে ঢুকবি মুখ চেপে ধরে বাঁধবি চিল্লাতে না পারে মত তারপর মাল হাতিয়ে মালিককে সাবাড় করবি। যতদিনে পুলিশ বা পড়শি দরজা ভেঙ্গে ঢুকবে ততদিনে সব সোনা গালিয়ে বাজারে চালান হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় কন্ঠ: আরে দাদা রেগে যাচ্ছ কেনো? কোনো চিন্তা নেই একলা মানুষ তো আরামসে কাজ হয়ে যাবে। সেই বেলেঘাটার বুড়োটার মত তো আর হবেনা। 

ফোনটা আবার গন্ডগোল করছে। লাইনে কড়কড় আওয়াজ আসছে।

প্রথম কন্ঠ: নে নে ... দেরী করিসনা। সবকিছু ... ... ... নিয়েছিস তো? 
দ্বিতীয় কন্ঠ: হ্যাঁ সব আছে ওস্তাদ। ফ্ল্যাটের চাবি যন্তর … …
প্রথম কন্ঠ: ঠিকানা মনে … …
দ্বিতীয় কন্ঠ: হ্যাঁ হ্যাঁ বস একশো … … দার্ন অ্যাভিনি… সব আমার এলাকা চোখ বন্ধ …… যেতে পারি। 
প্রথম কন্ঠ: নে নে আর ক্যালি … … হবেনা। ঠিক তিন … … বাড়ির পাশের … রোডে  আমি দাঁড়িয়ে … …
দ্বিতীয় কন্ঠ: ঠিক আছে গুরু … …

(লাইন কেটে গেল। খালি মিসেস সরকারের ফোন তখনো কড়কড় করছে। রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন)

শ্রীমতি সরকারের মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরছে। চোখে মুখে আতঙ্ক। একে প্রেসারের রোগী তার ওপর হঠাৎ করে এমন এক ভয়ঙ্কর খবর।  নম্বরটা শুনতে পেলেননা ফোনে কিন্তু শ্রীমতি সরকারের বাড়ির নম্বর একশ তিরাশি, তার মানে বাড়ির কাছাকাছিই। কি করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেননা। লোকটা বলল বিকেলের মধ্যে কাজ সারবে তার মানে এক দেড় ঘন্টার মধ্যে বাড়ির কাছাকাছি একটা খুন বা ডাকাতি ঘটবে। 

(দেয়াল ইউনিট ধরে দাঁড়ালেন খানিকক্ষণ। ধাতস্থ হয়ে গেলাসে জল ঢেলে খেলেন অল্প একটু)

শ্রীমতি সরকার (স্বঃ): কি সাংঘাতিক। ঘরের দোরগোড়ায় খুন! এ হতে দেয়া যায়না। 

(ফোন ডায়াল করলেন থানায়)

শ্রীমতি সরকার: হ্যালো, লেক থানা? 
পুলিশ অফিসার: বলছি। আপনার নাম?
শ্রীমতি সরকার: আমার নাম বসুন্ধরা সরকার, একটা খুব জরুরি খবর আছে। 
পুলিশ অফিসার: কি ব্যাপার বলুন। 
শ্রীমতি সরকার: আমি এইমাত্র ফোনে ক্রস কানেকশন হয়ে দুজন লোকের কথা শুনতে পেলাম। তারা সাদার্ন অ্যাভেনিউর এক ফ্ল্যাটে ডাকাতি আর মালিককে খুনের ফন্দি করেছে।  
পুলিশ অফিসার: ইন্টারেস্টিং, একটু খুলে বলুন ক্রস কানেকশন কিকরে হলো?
শ্রীমতি সরকার: আমাদের এক্সচেঞ্জটা কাজ করছেনা কয়েকদিন, ফোনে প্রায়ই গন্ডগোল। এখুনি ডায়ালটোন খুঁজতে গিয়ে গলা দুটো শুনতে পেলাম। আজ দুপুরে তারা কোনো একটা বাড়ি ঢুকে মালিককে খুন করে বাড়ির সব সম্পত্তি হাতানোর কথা বলছিল।  
পুলিশ অফিসার: এই বললেন ফ্ল্যাট আবার বলছেন বাড়ি ঠিক কি বলল লোকগুলো?
শ্রীমতি সরকার: না না ফ্ল্যাটই বলল।   
পুলিশ অফিসার: আচ্ছা। লোকগুলোর নাম শুনতে পেলেন?
শ্রীমতি সরকার: না তবে একজন ভারি গলা আর অন্যজন একটু কম বয়েসের মনে হয়।  ভারী গলা মনে হয় প্ল্যান করছে সব।
পুলিশ অফিসার: কোন বাড়ি, কি নাম কিছু শুনতে পেলেন?
শ্রীমতি সরকার: না না লাইনটা আবার বিগড়ে গেল যে।  বলল একশ কিছু একটা, সাদার্ন অ্যাভিনিউই মনে হয় বলল, ঠিক শুনতে পেলামনা।
পুলিশ অফিসার: ম্যাডাম ঠিক শুনেছেন তো, এই তো বললেন আদ্ধেক শুনতে পাননি। 
শ্রীমতি সরকার: না প্রথম দিকে তো ক্লিয়ারই ছিল।  দেখুন আপনারা তাড়াতাড়ি কিছু করুন দয়া করে, এরা তো খুনের কথা বলছে। 
পুলিশ অফিসার: আচ্ছা আচ্ছা দাঁড়ান ওসির সাথে কথা বলে দেখি। লাইনে থাকুন।
শ্রীমতি সরকার: আচ্ছা।

শ্রীমতি সরকার অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন কিন্তু আর যে কি করবেন ভেবে পাচ্ছেননা। প্রায় পাঁচ মিনিট কেটে গেল পুলিশের সাড়াশব্দ নেই। 

(ফোনের রিসিভারটা ধরে অস্থির পায়ে খানিক হাঁটতে শুরু করলেন। পুলিশ অফিসারের গলা শুনতে পাওয়া গেল আরো ২-৩ মিনিট পর। 

পুলিশ অফিসার: ম্যাডাম আচ্ছেন নাকি লাইনে?
শ্রীমতি সরকার: হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। কি বললেন ওসি?
পুলিশ অফিসার: দেখুন ম্যাডাম আপনি তো ঠিকঠাক কোনো ইনফরমেশনই দিতে পারছেননা। ঠিকানা শুনতে পাননি, ফ্ল্যাটের নম্বর ঠিক জানেননা, মালিকের নাম শোনেননি, কোন ভরসায় তদন্ত করা শুরু করি বলুন তো?
শ্রীমতি সরকার: যা যা শুনলাম বললাম তো আপনাকে। 
পুলিশ অফিসার: দেখুন অপরাধ নেবেননা। হয়ত কেউ ফোনে মস্করা করেছে সেটাও তো হতে পারে?
শ্রীমতি সরকার: একদন না, যেভাবে লোকগুলো কথা বলছিল...
পুলিশ অফিসার: তাতে কিছুই প্রমান হয়না। আপনার বাড়ির নম্বরটা কি যেন বললেন?
শ্রীমতি সরকার: একশ তিরাশি। ছতলায় ফ্ল্যাট এগারো।
পুলিশ অফিসার: দেখুন ওদিকটা তো গোলপার্ক থানা, আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে। আপনি বরং গোলপার্ক থানায় একটা ফোন করুন।
শ্রীমতি সরকার: কি আশ্চর্য মানুষের জীবনমরণ সমস্যা আর আপনারা এলাকা দেখাচ্ছেন?
পুলিশ অফিসার: দেখুন আপনার দেয়া তথ্যে কাজ করা যায়না। তাছাড়া রোববারের বাজার থানায় লোকই নেই যে টহলে পাঠানো যাবে। গোলপার্ক থানায় করুন ওরা কিছু করতে পারে কিনা দেখুন। আচ্ছা ধন্যবাদ।

(কিছু বলার আগেই ফোন কেটে গেল কট করে।) 

শ্রীমতি সরকার: হ্যালো হ্যালো?...কি ছোটলোক!

শ্রীমতি সরকার খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন রিসিভারটার দিকে, যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছেননা যে পুলিশ অমনভাবে লাইন কেটে দিতে পারে।

(এই সময় আড়াইটের ঘন্টা বাজলো দেয়াল ঘড়িতে ঢং করে। খানিকটা চমকে উঠে ঘড়ির দিকে দেখলেন শ্রীমতি সরকার।)

শ্রীমতি সরকার: (স্বঃ) আড়াইটে বেজে গেলো? গোলপার্কের পুলিশগুলোও এরকমই হবে নাতো? দেখা যাক। 

(ডাইরেক্টরি খুঁজে গোলপার্ক থানার নাম্বার যোগাড় করে ডায়াল করলেন)

পুলিশকন্ঠ: গোলপার্ক থানা এসি সুমন আচার্য বলছি। 
শ্রীমতি সরকার: হ্যালো আমার নাম বসুন্ধরা সরকার। খুব জরুরী ব্যাপার। 
এসি: বলুন মিসেস সরকার কী সাহায্য করতে পারি?
শ্রীমতি সরকার: একটু আগে আমার ফোনে ক্রস কানেকশন হয়ে গিয়েছিল। দুজন লোক সেখানে কাউকে খুন করে তাদের ফ্ল্যাটে ডাকাতি করার প্ল্যান করছিল। আজ দুপুরেই কাজ সারবে বলছিল। আমি লেক থানায় ফোন করলাম ওরা বলল কিছু করতে পারবেনা আপনাদের থানায় ফোন করতে হবে। তাড়াতাড়ি কিছু করুন। 
এসি: হ্যাঁ লেক থানার একটু দুর্নাম আছে এ ব্যাপারে আমাদের থানায় কেস দায়ের করানোর। খুলে বলুন একটু কি শুনেছেন ক্রস কানেকশানে?
শ্রীমতি সরকার : দুজন লোক কথা বলছিল, একজন মনে হয় আসল মাথা অন্যজন অর্ডার নিচ্ছিল কি করতে হবে।  সাদার্ন অ্যাভিনিউর একশ কিছু নাম্বারের বাড়িতে ডাকাতি করবে, মালিককে মেরে ফেলে বাড়িতে সোনাদানা লুঠ করবে। 
এসি : হুম এতো বেশ সিরিয়াস ব্যাপার। লোকগুলোর গলা শুনলে চিনতে পারবেন?
শ্রীমতি সরকার : হ্যাঁ তা ঠিক পারব। কিন্তু লোকগুলো তো বলছিল এই দুপুরেই কাজ সারবে।  আপনি কোনো পুলিশ লাগাতে পারবেন না? পুলিশ দেখলে হয়ত প্ল্যান পাল্টাতে বাধ্য হবে।  
এসি : সে আমরা দেখছি। রবিবারে এমনিতে কম পুলিশ থাকে থানায়, এমার্জেন্সি ছাড়া গাড়ি ইয়ুজ করিনা তবে খুনের ব্যাপার তো সিরিয়াস। আর কোনো ক্লু শুনতে পেলেন? বাড়ির নাম্বার বা নাম?
শ্রীমতি সরকার : নাহ। বাড়ির নাম্বার একশ তারপর কি বলল শুনতে পাইনি ঠিক।  লাইনটা আবার গন্ডগোল করছিল। কিন্তু নাম্বারের পর সাদার্ন অ্যাভিনিউ পরিস্কার শুনলাম। দুজনে বাড়ির পাশের কোন এক রোডে মিট করবে। তবে বলছিল যদ্দিনে পুলিশ ফ্ল্যাটে ঢুকবে সোনাদানা ততদিনে গালিয়ে বাজারে পাচার হয়ে গেছে।  আর যে ডাকাতি করবে সে আগেও অনেক এরকম কাজ করেছে আর খুনও করেছে। যে সাগরেদ সে কদিন গায়েব হয়ে যাবে কিন্তু ভাগ গনেশ বলে কারো কাছে থাকবে। 
এসি : বটে, তাহলে তো পুরনো পাপী। তবে গয়না গালিয়ে বাজারে চালান ক্রিমিনালদের রেগুলার প্রসেস...গনেশ নামটা খতিয়ে দেখতে হবে লোকাল ক্রিমিনাল লিস্টে। 
শ্রীমতি সরকার :  আর হ্যাঁ, বলছিল বেলেঘাটার কোনো বুড়ো নাকি খুব ট্রাবল দিয়েছিল এদের। 
এসি : (চমকে) বেলেঘাটার বুড়ো?!!! আপনি স্পষ্ট শুনেছেন তো?
শ্রীমতি সরকার : হ্যাঁ কেনো এটা কোনো ক্লু বুঝি?
এসি : বেলেঘাটায় রিসেন্টলি একটা নৃশংস খুন হয়।  এক বুড়ো মানুষের ফ্ল্যাটে দুজন লোক ডাকাতি করতে যায়।  ভদ্রলোক এক্স সার্ভিসম্যান, ডাকাতদের বিনা মোকাবিলায় যেতে দেননি। শেষে এত শব্দ হয় যে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন হাঁক মারতে থাকে, ডাকাত দুজন পালিয়ে যায় কিছু না হাতিয়েই। বৃদ্ধ অনেক ছুরির আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।  কিন্তু সারভাইভ করতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। তবে পুলিশকে স্টেটমেন্ট দেন মারা যাবার আগে, আর পাড়ার লোকজনদের কাছে থেকে ডাকাতদের একটা আইডিয়াও পাওয়া যায়।  
শ্রীমতি সরকার : কি সাংঘাতিক!!
এসি : হ্যাঁ। এটা কলকাতা পুলিশের একটা বড় তদন্ত। সব থানাই মোটামুটি জানে কেসটার ব্যাপারে। আপনার তথ্য অনুযায়ী এরাই তাহলে সেই দল মনে হচ্ছে। তবে শুনে তো মনে হচ্ছে শুধু দুজন লোক অপারেট করছে, আমাদের ধারণা ছিল অর্গানাইজড ক্রাইম। কম লোকের গ্যাং ধরা কঠিন। 
শ্রীমতি সরকার : তাহলে তাড়াতাড়ি কিছু করুন। এক দেড়ঘন্টা তো বাড়ি বিকেল হতে।  
এসি : হ্যাঁ হ্যাঁ আমি দেখছি কি করা যায়।  এখুনি টিম তৈরী করছি। আপনি আপনার ডিটেলস গুলো একটু বলুন ডায়রি করার জন্যে।
শ্রীমতি সরকার : লেক থানাকেও তো দিলাম ডিটেলস। শুরু করুন তবে। 
এসি : স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস ম্যাডাম। আপনার নামটা আর একবার বলুন। সরকার বললেন তো?
শ্রীমতি সরকার : হ্যাঁ। বসুন্ধরা সরকার।
এসি : বাড়ির ঠিকানা?
শ্রীমতি সরকার : একশ তিরাশি সাদার্ন অ্যাভিনিউ। ছ তলায় ফ্ল্যাট এগারো। 
এসি : ওকে। আর আপনি বলছিলেম যে বাড়িতে ডাকাতি করার প্ল্যান সেটাও একশোর ঘরের নাম্বার?
শ্রীমতি সরকার : হ্যাঁ সেরকমই তো শুনলাম। 
এসি :তাহলে তো আপনার বাড়ির আশেপাশে। ছতলা বললেন না? আপনি আমাদের হেল্প করতে পারেন বারান্দা থেকে সন্দেহজনক কোনো অ্যাকটিভিটি দেখলে পুলিশকে খবর দিতে পারেন।
শ্রীমতি সরকার : ঠিক আছে আমি চোখ রাখবো রাস্তায়। 
এসি : থ্যাঙ্ক ইউ ম্যাডাম। গ্রুপটাকে হাতেনাতে ধরতে পারলে আপনার একটা পুরস্কারও জুটতে পারে দু হাজার টাকা কোলকাতা পুলিশ থেকে। 
শ্রীমতি সরকার : আমার আর এই বয়সে টাকাপয়সার দরকার নেই ভাই। একা থাকি বাড়িতে পাড়ার আশপাশটা যদি নিরাপদ থাকে সেটাই নিশ্চিন্তি। 
এসি : হুঁ। আপনি একা থাকেন তাহলে ফ্ল্যাটে?
শ্রীমতি সরকার : হ্যাঁ একাই আপাতত। কাজের একটা মেয়ে থাকে সারাদিন সে এখন ছুটিতে। 
এসি : ওকে। আপনি যখন একা বাড়িতে একটু এক্সট্রা কেয়ারফুল থাকবেন। নাম না জিগ্যেস করে দরজা খুলবেননা সে যখনই হোক না কেন। 
শ্রীমতি সরকার : আমি খুলিনা বিশেষ করে ইদানীং ফ্ল্যাটে ডাকাতি শুরু হবার পর আরোই না। কাজের মেয়েটাকেও শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছি। 
এসি : এক্সেলেন্ট। আচ্ছা ম্যাডাম আমি অপারেশন চালু করছি। আপনি নজর রাখুন। আচ্ছা ধন্যবাদ। 
শ্রীমতি সরকার : ধন্যবাদ। 

(ফোন কেটে গেল। শ্রীমতি সরকারের ভাবভঙ্গি অনেক আশ্বস্ত। ঘড়ি দেখলেন। তিনটে বাজতে দশ। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন যদি কিছু দেখা যায়।)

(বারান্দার বাইরে শীতের বিকেলের দৃশ্য। পড়ন্ত মিঠে রোদে লেকের জল ঝিলমিল করছে। দুরে বড় লেকে দুটো রোয়িং নৌকো প্র্যাকটিস করছে। রাস্তায় জনমানুষের চিহ্ন নেই। মাঝে হঠাৎ হুশ করে চলে গেল একটা ২২১ গোলপার্কের দিকে। দুরে কোনো মাঠে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে, ভেসে আসছে ব্যাটবলের ঠক ঠক শব্দ আর মাঝেমধ্যে হাউজ্যাট)

শ্রীমতি সরকারের মনটা খারাপ হয়ে গেল। শীতের এ কটা মাসই যা উপভোগ করা যায় গরম আর বৃষ্টি ছাড়া। এ সময়টা তিনি আয়েস করে এককাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসেন, এই নিরিবিলি বিকেলটা এনজয় করেন। কিন্তু এই দিনটা যে একেবারে অন্যরকম। এই অপরূপ শীতের বিকেলের পটভূমিতে ঘটতে চলেছে এক বর্বর হত্যাকাণ্ড। খানিকটা উত্তেজিতও হয়ে উঠলেন যদি সত্যিই পুলিশ ধরতে পারে খুনিগুলোকে। গোয়েন্দা গল্পের তেমন ভক্ত না হলেও লীলা মজুমদারের রোমাঞ্চকর গল্পগুলো মনে পড়ে গেল। কলকাতা পুলিশ কি সত্যি তাঁকে পুরস্কার দেবে?

(আনমনা হয়ে তাকিয়ে ছিলেন শ্রীমতি সরকার, চমক ভাঙলো ঘড়িতে তিনটে বাজতে। রাস্তার দিকে চাইলেন যদি কিছু দেখা যায়। গাছে ঢাকা সাদার্ন অ্যাভিনিউ যেন হলদে পাতার জালে জড়ানো। শ্রীমতি সরকার ব্যালকনি থেকে গোলপার্ক আর স্টেডিয়াম দুদিকেই দেখে নিলেন। রাস্তা যে কে সেই ফাঁকা।)

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) আর কতক্ষণ যে বাকী! পুলিশের দেখা নেই এখনো। 

(অস্থির হয়ে ঘড়ির দিকে দেখলেন আবার। সবে তিনটে পাঁচ। শ্রীমতি সরকার অপেক্ষা করছেন কখন চারটে বাজবে। স্কুল ছুটি হলেই এদিকটা আবার জমজমাট। গোলপার্কের দিক থেকে একটা ২২১ দাঁড়াল শ্রীমতি সরকারের ফ্ল্যাটবাড়ি ছাড়িয়ে লেক কালীবাড়ি স্টপেজে। 

হঠাৎ চোখে পড়ল ২২১টা যেদিক থেকে এসেছিল সেদিক থেকে একটা সাইকেল আসছে। অন্য দিন হলে ঠাহর করে দেখতেননা কিন্তু আজ ভাল করে দেখতে হবে বলে নজরে রাখলেন। হতেও পারে এই খুনি কিম্বা প্লেন ড্রেসের পুলিশ। সাইকেলটা ডানদিকে ঘুরে কেয়াতলা রোডের দিকে মোড় নিল।)

শ্রীমতি সরকারের বারান্দা থেকে ওদিকটা দেখা যায়না কিন্তু বসার ঘরের অন্য জানলা গিয়ে পুরোটাই চোখে পড়ে। ফ্ল্যাটবাড়িটা দুই রাস্তার কোনে না হলেও কোনের তিনটে বাড়ি দুই আর তিনতলা তাই কেয়াতলা রোডের একটা ফুটপাথ পুরোটাই নজরে আসে। 

(শ্রীমতি সরকার বসার ঘরের জানলা দিয়ে উঁকি মারলেন কেয়াতলা রোডের দিকে। সাইকেলওয়ালা সাইকেল দেয়ালে দাঁড় করিয়ে অন্য একজন লোকের সাথে কথা বলছে। খানিক দুরে এক ফুচকাওয়ালা টিউকল থেকে জল ভরছে। লোকদুটো ফুচকাওয়ালার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে আবার কথা শুরু করল। সাইকেলওয়ালার পরনে চেক শার্ট হাতকাটা সোয়েটার খাকি প্যান্ট হাওয়াই চটি সাইকেলের হাতল থেকে একটা সাদা ব্যাগ ঝুলছে। অন্য লোকটার গায়ে নীল ফুলহাতা সোয়েটার জিনস স্পোর্টস শু অল্প টাক। কথা বলতে বলতে দুজনেই চারপাশের বাড়িগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নিলো, শ্রীমতি সরকারের ফ্ল্যাটের দিকেও দেখল, শ্রীমতি সরকার ঝট করে সরে এলেন। মনে হয় এতো দুরে দেখতে পায়নি তাঁকে।)

(শ্রীমতি সরকার ফোন তুলে ডায়াল করলেন গোলপার্ক থানা। ডায়াল করে রিসিভারটা কানে তুললেন। ফোন আবার ডেড, কোনো ডায়ালটোন নেই। খালি মাঝেমধ্যে কড়কড় আওয়াজ)

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) উঃ ঠিক যখ্খুনি দরকার তখনই ফোনটা আবার গেল? কোন কাজে আসেনা ক্যানসেল করে দেব সামনের মাসে। মরতে ক্রস কানেকশানটাই যে কেন হতে হল, কলটা না শুনলে তো পুরো রবিবারের বিকেলটা এমন বরবাদ হতনা। 

(আবার বসার ঘরের জানলা দিয়ে চাইলেন। লোকদুটো গায়েব। ফুচকাওয়ালা জল নিয়ে অনেকটা দুরে এখন। শ্রীমতি সরকারের কেন যেন মনে হচ্ছে ওই দুটো লোকই কালপ্রিট। ঘড়ির দিকে তাকালেন আবার। সময় যেন থেমে গেছে ঘড়িটায়। সোয়া তিনটেও বাজেনি এখনো। পুলিসকে আবার ফোন করার জন্য ফোন তুললেন। ডায়ালটোন নেই। বারান্দায় গিয়ে নিচের দিকে চাইলেন। নীল সোয়েটার সাদার্ন অ্যাভিনিউর ওপারে কেয়াতলা রোডের মোড়ের উল্টোদিকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরিয়েছে। সাইকেলওয়ালাকে দেখা যাচ্ছেনা)

(গোলপার্কের দিক থেকে হঠাৎ দেখা গেল একটা পুলিশ জিপ। শ্রীমতি সরকার একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।) 

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) বাঁচাল তবে! এসি লোকটা তাহলে কথা রেখেছে। পুলিসকে এখনো ভরসা করা যায়। অন্য লোকটা কোনদিকে গেল কে জানে। 

(নীল সোয়েটারকে একটু অস্থির দেখাচ্ছে। চট করে সিগারেট ফেলে পকেটে হাত ঢোকালো। পুলিশ গাড়ি কিন্তু  থামলোনা। বরং হুশ করে চলে গেল শরৎ বোস রোডের দিকে। নীল সোয়েটার আবার আরাম করে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। দেখে মনে হচ্ছে লোকটা কেয়াতলা রোডের দিকেই তাকিয়ে আছে। সাইকেলওয়ালা তাহলে ওদিকেই গেছে মনে হয়। শ্রীমতি সরকার অন্য জানলার দিকে গেলেন।)

(কেয়াতলা রোড শুনসান। আরো ভালো করে দেখার জন্য ঝুঁকে দেখলেন জানলা থেকে। নিচে ফ্ল্যাটে ঢোকার মেন বড় গেট। আর একটু মাথাটা বাড়িয়ে দেখলে ফ্ল্যাটবাড়ির কমন উঠোন পেরিয়ে বাড়ির মেন এনট্রান্সটা দেখা যায়। সেদিকে একবার চাইলেন শ্রীমতি সরকার। দেখলেন সাদা ব্যাগ আর হাওয়াই চটি পরা একটা খাকি প্যান্ট পা উধাও হয়ে গেল বাড়ির ভেতরে।)

বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল শ্রীমতি সরকারের। মনে মনে ঝালিয়ে নিলেন লোকগুলো ফোনে যা বলছিল। সাদার্ন অ্যাভিনিউ, কেয়াতলা রোডে দেখা করার কথা, একশো তিরাশির বাড়ি। যে অংশগুলো শুনতে পাননি সেগুলো এখন খাপেখাপে জোড়া লেগে যাচ্ছে। 

(শ্রীমতি সরকার আবার ফোন ট্রাই করলেন। পুলিশ ভ্যানটা খুব বেশীদুর যায়নি হয়ত। রিসিভারে ডায়ালটোন শোনা যাচ্ছে। উদগ্রীব হয়ে সব বলার জন্য তৈরী হঠাৎ শোনা গেল সেই পরিচিত গলা "এই নম্বরটি এখন ব্যস্ত। দয়া করে একটু পর আবার ডায়াল করুন")

(শ্রীমতি সরকার অধৈর্য হয়ে বসার ঘরে পায়চারী করছেন।  আবার বারান্দায় গেলেন। যদি পুলিশ ভ্যান দেখেন চিৎকার করবেন। নীল সোয়েটার তখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। ঘড়িটা দেখে নিল একবার তারপর ওপর দিকে চাইল…)

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) একী এ তো আমারই দিকে দেখছে।  তবে কী…

(লোকটা তাকানো শেষ করে হাঁটা দিল কেয়াতলা রোডের দিকে)

আতঙ্কে শ্রীমতি সরকারের রক্ত জল হয়ে গেল। এতক্ষণ তিনি ক্রস কানেকশানে কথা শুনে বিন্দুমাত্রও ভাবেননি যে এরা তাঁকেই মারার প্ল্যান করছে। খুন রোখার সঙ্কল্পে পুলিসকে ফোন করে রিপোর্ট করতে করতে তিনিও যে তাদের লক্ষ্য হতে পারেন সেটা একবারও ভাবেননি। তবু একবার আবার মনে করার চেষ্টা করলেন চব্বিশ ফ্ল্যাটের বাড়িতে আর কে কে একা থাকে। নীল সোয়েটার হয়ত গেল সাগরেদকে সাবধান করতে। 

(শ্রীমতি সরকারের চিন্তার জাল তছনছ হয়ে গেল পায়ের শব্দে। খুব হাল্কা শব্দ কিন্তু পরিস্কার। সিঁড়ি ভেঙে খসখস আওয়াজটা তাঁর দরজার সামনেই থামল। শুনতে পাচ্ছেন ঠুংঠাং চাপা ধাতব শব্দ।)

নড়াচড়ার কোন শক্তি আর নেই শ্রীমতি সরকারের। শুধু মনে পড়ে গেল তাঁর সব সোনাদানা ব্যাঙ্ক থেকে কদিন আগে তুলে এনেছিলেন অন্য ব্যাঙ্কে রাখবেন বলে, তাঁর নিজের সব গয়না তার ওপর ছেলের বৌয়ের কয়েকটা। মনে পড়ে যাচ্ছে কাজের মেয়ে ভারতীকে বলছেন পরের বার বলবেন ওদের গয়না যেন নিয়ে যায় সাথে করে। একলা মানুষ বাড়িতে, সোনাগয়না রাখা বাড়িতে–আসল টার্গেট যে তিনিই সেটা অনুমান করতে এত সময় লাগল। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। 

শ্রীমতি সরকার : (স্বঃ) না এ হতে পারে না… শেষে কিনা আমিই…(দৌড়ে বারান্দায় গেলেন)…বাঁচাওওও

(শ্রীমতি সরকারের চিৎকার তেমন জোরে শোনা গেলনা। গলা শুকিয়ে কাঠ। দরজার ইয়েল লকটা আস্তে আস্তে ঘুরে গেল। দরজাটা অল্প খুলতে দেখা গেল উল্টোদিকে নব ধরে আছে চেক শার্ট পরা একটা হাত…)

যবনিকা